জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর নিত্যপণ্যের দর নতুন করে লাফ দেয়ার মধ্যে এত দাম বাড়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করছেন, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ সব সময় সুযোগ নিয়ে বাড়তি মুনাফা করে। এবারও তাই হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাকেও সারা বিশ্বের সংকটের জন্য দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া- দুই দেশের লাভ হলেও সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে।
গণভবনে রোববার আওয়ামী লীগের আটটি বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর এমনিতে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছিল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। বিশ্ববাজারে খাদ্যের একটি বড় অংশের জোগানদাতা এই দুটি দেশ থেকে খাদ্য যেতে না পারার পর দাম বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে।
খাদ্যের পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামের ঊর্ধ্বগতি এই মূল্যস্ফীতির চাপকে আরও বাড়িয়েছে। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত। এতে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে আরও।
তবে এ ক্ষেত্রে পাইকারির চেয়ে খুচরায় দাম বাড়ার হার অনেক বেশি। পাইকারিতে কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে যেসব পণ্যের, খুচরায় বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা, ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়ে বেশি। অভিযোগ আছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা মানুষের মনের উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি মুনাফা করছেন।
ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে বাড়তি দর নিচ্ছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু লোক তো থাকেই অপ্রয়োজনেও জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয় ছুতা ধরে। সেটাই হচ্ছে কিছু কিছু। না হলে এত দাম তো বাড়ার কথা নয় প্রত্যেকটা জিনিসের।’
রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের কারণে বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘করোনা যেতে না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন জনজীবনে সর্বনাশ ডেকে আনছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সারা বিশ্বের সাধারণ জনগণ।
‘আমেরিকা স্যাংশন দিল রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য। দেখা যাচ্ছে যে শায়েস্তা হচ্ছে সাধারণ মানুষ। শুধু আমাদের দেশ বলে নয়, ইউরোপের দেশগুলো এমনকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া- প্রত্যেকটি মহাদেশের মানুষেরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সব জিনিসের ওপরই এর একটা প্রভাব পড়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্যাংশন দিয়ে লাভটা কী হলো? বাস্তবিক যদি লাভ কারও হয় তাহলে সেটা আমেরিকা ও রাশিয়ারই হয়েছে। কেননা বিশ্ববাজারে ডলার এবং রুবলের (রাশিয়ার মুদ্রা) মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। তবে মরছে সাধারণ মানুষ।’
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে এর দাম সমন্বয় করা হবে বলে ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘যখনই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে, আমরা সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাডজাস্ট করব, সেটাও আমার নির্দেশ রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের কষ্ট যে হচ্ছে সেটা তার সরকার উপলদ্ধি করতে পারছে বলেই প্রতিনিয়ত সেই কষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের সমস্যাও অনেকটাই দূর হয়ে যাবে বলেও জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘হয়তো আর কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু হলে বিদ্যুতের এই সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।’