জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপণ্যসহ নানা পণ্যের মূলের ওপর যে প্রভাব পড়েছে, তাতে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। এ অবস্থায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের জনসাধারণ।
সার্বিক পরিস্থিতিতে অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, তাতে হয়তো আক্ষরিক অর্থেই পথে বসতে হতে পারে কাউকে কাউকে। এদেরই একজন নুরুল ইসলাম বলছেন, 'আমার ভয় হয়, দ্রুতই হয়তো রাস্তায় ভিক্ষা করতে নামতে পারি।'
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে রোববার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতেই এসব কথা বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম বিবিসি দিয়েছে, ‘বাংলাদেশে জ্বালানির দাম: আমি হয়তো রাস্তায় ভিক্ষা করতে নামব’।
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রল ও অকটেনের দাম যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৬ টাকা করে বাড়ায় সরকার। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়। প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা। শতকরা হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ৫১ শতাংশ।
জ্বালানির মূল্য বাড়ানোর পেছনে বিশ্ববাজার পরিস্থিতিকে দায়ী করা হচ্ছে। অবশ্য ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা প্রেক্ষাপটের মাঝে বাড়লেও বিভিন্ন দেশে এখন জ্বালানির মূল্য অনেকটাই সহনীয়। এ নিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছে সরকার।
৯ বছর ধরে দিনাজপুর থেকে ট্রাকে সবজি নিয়ে তা ঢাকায় পৌঁছে দেন চালক নুরুল ইসলাম। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি কীভাবে তার জীবনে প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি। তিনি যে বেতন পান তাতে দুই সন্তান, স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে তার জন্য।
নুরুল বলেন, ‘নিত্যপণ্যের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বাজারে যখন যাই, তখন পুরো পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারি না।
‘তেলের দাম যদি এমন করে বাড়তে থাকে, তাহলে তো আমি বাবা-মাকে দেখাশোনা করতে পারব না। ছেলে দুটিকেও স্কুলে পাঠাতে পারব না।’এই ট্রাকচালক বলেন, ‘চাকরি না থাকলে আমাকে তো রাস্তায় ভিক্ষা করতে নামতে হবে।’
অবশ্য এই অবস্থা এখন যে শুধু নুরুলের তা নয়, তার মতো স্বল্প আয়ের অধিকাংশ মানুষকেই একই ধরনের শঙ্কার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত সামান্য বেশি আয়ের মানুষও পড়েছেন এমন অবস্থায়।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে বাসভাড়া বেড়ে যাওয়ায় শুধু অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া সব ধরনের ভ্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে জাকিয়া সুলতানা। তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতেও।
জাকিয়া বলেন, ‘শুধু যে বাসভাড়া বেড়েছে তা নয়, বাজারে সব কিছুর দামই এখন বেড়েছে। আমার পরিবারের খরচ মেটানো কঠিন হয়ে গেছে।
‘এটা শুধু বাসভাড়া বৃদ্ধি নয়, রিকশাসহ সব যানবাহনেরই ভাড়া বেড়েছে। বাসা থেকে বের হওয়াই তো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
সার্বিক পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘জ্বালানির দাম অনেক বেড়েছে। বিশ্ববাজারে যদি দাম বাড়ে, তাহলে আমাদের কী করার আছে?’
সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে এ খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। তবে এখন মূল্যবৃদ্ধিটা অনিবার্য ছিল।’