শিক্ষার্থী আবরার হত্যার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। রাজনীতি নিষিদ্ধের মধ্যেই ক্যাম্পাসে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করে বুয়েট ছাত্রলীগের সত্তর ও আশির দশকের সাবেক নেতারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার বিকেল ৫টা থেকে বুয়েট ক্যাফেটরিয়ার সেমিনারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বুয়েটের সাবেক নেতাদের ব্যানারে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান শুরু হয়।
খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটরিয়ার বাইরে জড়ো হতে থাকেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
রাত ৮টার দিকে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা যখন ক্যাফেটরিয়া থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা এই বুয়েটে হবে না’ বলেও স্লোগান দেন। এ সময় বুয়েটের বিভিন্ন ব্যাচের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
তার কিছুক্ষণ পর আশির দশকে বুয়েট ছাত্রলীগের এক নেতা শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করতে আসছি।’
তখন শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আমরা সবাই ভালোবাসি। বঙ্গবন্ধু সবার। ওনার জন্য দোয়া করতে ছাত্রলীগের ব্যানার কেন ব্যবহার করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয় তো ওনার জন্য দোয়া করতই।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শোক দিবস পালন নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি ব্যানারে ছাত্রলীগ শব্দ ব্যবহারে।’
সাবেক ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আমরা জানি বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। আমাদের প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। সবাই সত্তর-আশির দশকের নেতৃবৃন্দ ছিল। আমরা সবাই সাবেক।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলে উঠেন, ‘সাবেক ছাত্রলীগই আবরার ভাইকে হত্যা করেছে। আপনারাই আবরার ভাইকে হত্যা করেছেন।’
শিক্ষার্থীরা তখন ‘ছাত্রলীগ খুনি’ বলে স্লোগান দেয়া শুরু করলে সাবেক নেতারা বেরিয়ে যান।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সবাই বুয়েটের শিক্ষার্থী।
হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরদিন ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ।
আবরার হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। লাগাতার বিক্ষোভ আন্দোলনের পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ।
মামলাটির বিচারিক কাজ শেষে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।