ফরিদপুরে কনেকে সোনার আংটির পরিবর্তে ইমিটেশনের আংটি দেয়ায় বরসহ তার সঙ্গীরা মারধরের শিকার হয়েছেন। কনেপক্ষেরও আহত হয়েছেন দুজন।
নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতি ইউনিয়নের হিয়াবলদী গ্রামে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২৫ দিন আগে হিয়াবলদী গ্রামের শামিল শেখের কলেজে পড়া মেয়ে স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের জব্বার শেখের ছেলে শাহজাহান শেখের বিয়ে হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে গত শুক্রবার স্বর্ণাকে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন ছিল। এ উপলক্ষে বেলা আড়াইটার দিকে ৫০ জনের বরযাত্রী দল কনেপক্ষের বাড়িতে আসে।
খাওয়া-দাওয়া শেষে মেয়েকে সাজাতে কনেপক্ষ স্বর্ণের আংটি চাইলে বরপক্ষ ধরিয়ে দেয় ইমিটেশনের আংটি। আর তাতেই শুরু হয় হাঙ্গামা।
ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, ইমিটেশনের আংটি দেয়ায় বর ও কনেপক্ষ বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বর শাহজাহান শেখকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে কনেপক্ষের লোকজন।
ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজুল মাতুব্বর এসে সমঝোতার প্রস্তাব দিলে তাকে মারধর করে বরপক্ষ। এরপর বেড়ে যায় বিশৃঙ্খলা।
কনের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে ছেলেপক্ষ আমাদের কাছে ৪ লাখ টাকা দাবি করে। আমাদের দিতে দেরি হওয়ায় তারা বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছিল। এ ছাড়া মোবাইল ফোনে আমার মেয়ের সঙ্গে তার বর খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। তা ছাড়া ছেলেটি (বর) মাদকাসক্ত, যা আমরা বিয়ের পরে টের পেয়েছি।’
পিটুনিতে আহত বর শাহজাহান শেখেরও রয়েছে পাল্টা অভিযোগ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে এক পুরুষের একটি ছবি দেখেছি। এ জন্য মেয়েটিকে আমার ভালো চরিত্রের মনে হয়নি। এ ছাড়া আমার দুলাভাইয়ের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছে মেয়েপক্ষ। এ জন্য বিয়ে থেকে আমার মন উঠে গিয়েছিল। তারপরও আমরা বিয়ের উদ্দেশেই তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকেসহ সঙ্গীদের পিটিয়েছে। এরপর আর এই সামাজিক সম্পর্ক টিকতে পারে না। আমরা এখন বিয়েবিচ্ছেদের বিষয়টি ভাবছি।’
ফুলসূতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বলেন, ‘একটি তুচ্ছ বিষয় থেকে শুরু হয়ে ঘটনাটি এখন বিয়েবিচ্ছেদ পর্যন্ত গাড়াচ্ছে। বিয়েবিচ্ছেদের জন্য গতকালই ওই বাড়িতে কাজি ডাকা হয়েছে বলে শুনেছি।’
নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জ্যোতির্ময় চৌধুরী জানান, ওই ঘটনায় ৯ জন আহত হয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন পাঁচজন। আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন চারজন।
চিকিৎসাধীন চারজন হলেন- শাহ আলম মাতুব্বর, সাগরিকা বেগম, মিলন মোল্লা ও লালন।
নগরকান্দা থানার ওসি হাবিল হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত দেখতে পায়। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’