জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ কমিশন চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শনিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ আশার কথা জানান।
কমিশনের অগ্রগতির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের খোঁজার বিষয়ে কমিশনের রূপরেখা তৈরি করেছি। এখন কমিশন গঠন ও এর কার্যপ্রণালি নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, কোভিড যায় যায় করেও যাচ্ছে না। বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থাও অনুধাবন করছেন। এখানে অর্থনৈতিক বিষয়েও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
‘সে জন্য কমিশনের রূপরেখার বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়ে উঠছে না। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে আলোচনায় বসতে পারব। এই বছর নাগাদ আমরা হয়তো কমিশন চালু করতে পারব।’
এখন রূপরেখাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদন করবেন বলেও মন্ত্রী জানিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক আসামিদের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ১৭ জন সদস্যদের যারা খুন করেছে, এ মামলার যে আসামিরা দেশের বাইরে আছে, তাদের দেশে না আনা পর্যন্ত আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলব না। আনার প্রক্রিয়া সম্বন্ধেও বিস্তারিত বলব না।’
তিনি বলেন, ‘যে দুইজনের অবস্থান চিহ্নিত করা গেছে, তাদেরকে আনার জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
আসামিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি সহযোগিতা না পেতাম, তাহলে কিন্তু এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তার মানে বোঝায় আমরা কিছুটা সহযোগিতা পাচ্ছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য যারা দেশ চালিয়েছিল, তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমাদের বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সব সমস্যা একটা একটা করে শেষ করা হচ্ছে।
‘সেই জন্য আমাদেরও ইচ্ছা যদি তাড়াতাড়ি তাদেরকে ফিরিয়ে আনা যায়। এর মধ্যে মাজেদকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে আনা গেছে। আমরা এনেছি। রায় কার্যকরও হয়ে গেছে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী একদল সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় আক্রমণ করে। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে।
এ ছাড়া বেইলি রোডে সরকারি বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত ও আবদুল নঈম খান রিন্টুকে। আরেক বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে।
সে সময় দেশে না থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।