লাইব্রেরিয়ান পদে ছেলের চাকরির জন্য মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ১২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন বাবা। সভাপতির মেয়াদ শেষ হলেও মেলেনি চাকরি। বার বার তাগাদা দিয়ে ফেরত পাননি টাকাও। একপর্যায়ে সেই টাকা দিতে সভাপতির টালবাহানা।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুরের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সভাপতিকে টাকা দেয়া ৫৫ বছর বয়সী দবিরুল ইসলাম।
পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে সভাপতির লাঞ্ছনা ও দুশ্চিন্তায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দাবি করে মরদেহ নিয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে যায় মৃত দবিরুলের পরিবার ও এলাকাবাসী। ফেরত চান চাকরির জন্য দেয়া ১২ লাখ টাকা। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয় গণ্যমান্য, ইউপি সদস্য ও পুলিশের মধ্যস্থতায় ৬ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধানপাড়া গ্রামে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম রবি।
দবিরুলের পরিবারের বরাতে তিনি জানান, অভিযুক্ত জুলফিকার আলম প্রধান সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধানপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। দুই বছর আগে সভাপতি থাকাকালীন মাদ্রাসার লাইব্রেরিয়ান পদে ছেলে জাকিরুল ইসলামের চাকরির জন্য জুলফিকারকে ১২ লাখ টাকা দেন দবিরুল।
দুই মাস আগে জুলফিকারের সভাপতির মেয়াদ শেষ হলেও চাকরি পাননি দবিরুলের ছেলে জাকিরুল। চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চান দবিরুল, কিন্তু টাকা না দিয়ে কালক্ষেপণ করে আসছিলেন জুলফিকার। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে দবিরুলের কাছে ফের টাকা ফেরত চাইতে যান। এ সময় টাকা না দিয়ে উল্টো দবিরুলকে লাঞ্ছিত করে বাড়ি থেকে বের করে দেন জুলফিকার।
পরিবারের দাবি, টাকার দুশ্চিন্তা ও অপমান সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করেন দবিরুল। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর গত ৭ আগস্ট আবারও স্ট্রোক করেন তিনি। পরে রংপুরের প্রাইম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান তিনি।
দবিরুলের ছেলে জাকিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাকরির আশ্বাসে জুলফিকারকে বাবা ১২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। জমিজমা, প্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি করে বাবা এই টাকা দেন। কিন্তু তিনি আমার চাকরিও দেননি, টাকাও ফেরত দেননি। উল্টো বাবাকে লাঞ্ছিত, হয়রানি করেছেন।’
দবিরুলের ভাই বদিরুল ইসলাম বলেন, ‘চিন্তায় চিন্তায় আমার ভাই বারবার স্ট্রোক করেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ পর্যন্ত মারাই গেল। জুলফিকারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ ঘটনায় পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা মরদেহ নিয়ে অভিযুক্ত জুলফিকারের বাড়িতে অনশন করেন। পরে মধ্যরাতে সাতমেরা ইউপি সদস্য হেলালউদ্দীনের বাড়িতে বিষয়টি সমাধানে বসে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ থানা পুলিশ। সেখানে ১২ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা পরিশোধের শর্তে মীমাংসা হয়।
এ সময় দবিরুলের পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা দেয়া হয়। বাকি পাঁচ লাখ টাকা দুই মাসের মধ্যে পরিশোধ করার মুচলেকা দেন জুলফিকার। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন স্বজনরা।
ইউপি সদস্য হেলালউদ্দীন ছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন জগদল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর প্রধান, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, দবিরুল ইসলামের ভাই বদিরুল ইসলাম, ছেলে আব্দুস সবুর প্রধান, জুলফিকার আলী প্রধান।
মৃত দবিরুলের ছেলে আব্দুস সবুর প্রধান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুলফিকার আলী প্রধানকে ৬ লাখ টাকা মাফ করে দেয়া হয়েছে।’
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, ‘দবিরুল মারা যাওয়ার আগে তার ছেলে জুলফিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে তিনি মারা গেছেন।
‘মরদেহ নিয়ে অনশনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ৬ লাখ টাকা দেয়ার শর্তে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে দবিরুলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’