কক্সবাজার ও পার্বত্য বনাঞ্চলে এশিয়ান বন্য হাতি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আবাসস্থল ধ্বংস, করিডর বন্ধসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি বলে মনে করছেন তারা।
এ কারণে হাতির আবাসস্থল ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন।
বিশ্ব হাতি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের তারকামানের হোটেলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এ তাগিদ দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর আয়োজিত সেমিনারে জেলায় বিপন্ন প্রাণীর সংরক্ষণ এবং মানব-হাতি সংঘর্ষ কমাতে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশ বন বিভাগের সহায়তায় আইইউসিএন হাতির সংখ্যা জরিপ, আবাসিক ও পরিযায়ী হাতিদের চলাচলের পথ এবং করিডরের ম্যাপিং পরিচালনা করেছে।
২০১৬ সালে পরিচালিত সর্বশেষ হাতির সংখ্যা জরিপ অনুসারে, যে প্রজাতি একসময় দেশে ব্যাপক ছিল, এখন বেশির ভাগই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সীমাবদ্ধ।
কক্সবাজার অঞ্চলেও হাতির আবাসস্থল খণ্ডিতকরণ, বন উজাড় ও বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে এই প্রাণী।
২০১৭ সালে শরণার্থীদের আগমনের পর থেকে বনভূমি ধ্বংসের কারণে হাতির আবাসস্থল এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বন্য হাতি। আবাসস্থলের অবক্ষয় এবং চলাচলে বাধার কারণে রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় মানব-হাতি সংঘর্ষ শুরু হয়।
সেমিনারে ওই বছরের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানব-হাতি সংঘর্ষে ১২ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। তাই এ ধরনের সংঘর্ষ প্রশমিত করতে আইইউসিএন বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর-এর সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং এর আশপাশে ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য মানবিক-সংরক্ষণ কর্ম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এর ফলে শরণার্থী শিবিরের আশপাশে হাতির অনুপ্রবেশের প্রায় ৩৭৫টি ঘটনা ঘটলেও হাতি বা মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ ছাড়া, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে, হোস্ট এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা ২১১টি মানব-হাতি সংঘর্ষ প্রশমিত করেছে।
সেমিনারে দেশে বন্য হাতির অবস্থা, বণ্টন, আবাসস্থলের অবস্থা এবং বিদ্যমান হুমকির বিষয়ে আলোচনা করা হয়, যাতে এ অঞ্চলের অবশিষ্ট এশিয়ান হাতিদের রক্ষায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণে তাগিদ দেয়া যায়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদৌজা নয়ন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সারওয়ার আলম, ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তা লুয়ান ওসমানী ও আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন। এ ছাড়া সরকারি দপ্তর, মানবিক সংস্থা ও পরিবেশবিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এশীয় ও আফ্রিকান হাতির গুরুত্ব ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও হাতিদের সাহায্য করতে বিশ্বকে একত্রিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস পালন করা হয়।