মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘী হাওর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হচ্ছে ধানের চারা। এক হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক।
লোডশেডিংয়ের কারণে মনু নদী প্রকল্পের আওতায় কাশিমপুর পাম্প হাউস পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় হাওরঘেরা ৪০ গ্রামের কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। সমস্য নিরসনের দাবিতে তারা মিছিল-সমাবেশ করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সেচের সমস্যা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় কাউয়াদিঘী হাওর সাড়ে ২২ হাজার হেক্টর বিস্তৃত। মনু নদী সেচ প্রকল্পের আত্ততায় কাউয়াদিঘী হাওর ও হাওর এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ কাশিমপুর পাম্প হাউস। সেখানে ৮টি পাম্প বিদ্যুতের কারণে সচল না থাকায় আমন চাষের জমিতে ৩-৪ ফুট জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
পানিতে তলিয়ে আছে রোপা আমনের বীজতলা। পানি না কমায় আমন ধানের চারা রোপণের সময় চলে যাচ্ছে। বয়স্ক চারা রোপণ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।
হাওরপারের রাজন আহমেদ বলেন, ‘হাওরঘেঁষা রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদরে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি, আন্দোলন করছি, কিছুতেই ফল মিলছে না।’
এ সংকট নিরসনের দাবিতে দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন দুই শতাধিক কৃষক। কৃষি ও কৃষক রক্ষা কমিটির উপদেষ্টা সেলিম আহমদের সভাপতিত্বে ও হুমায়ুন রশিদ সোয়েবের সঞ্চালনায় সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন কৃষক সমিতি মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জহর লাল দত্ত, হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদ চৌধুরী, পাঁচগাঁও ইউনিয়নের বাবুল আহমদ, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ফয়ছল আহমদ, কৃষক নেতা সুলতান আহমদ, আক্তার মিয়া, সুলেমান মিয়া ও ইউপি সদস্য জুবেল আহমদ।
সমাবেশ শেষে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে কৃষি ও কৃষক রক্ষা কমিটি।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা পাউবো ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।’
পাউবোর যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এ হান্নান খান জানান, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কাশিমপুর পাম্প হাউসের ৮টি পাম্প চালু করা যাচ্ছে না । শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, অবিলম্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক শাখাসহ সবাইকে নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, মৌলভীবাজার জেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হচ্ছে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৩৩ টন।