বরিশালের এক তরুণীর প্রেমে পড়ে তার সঙ্গে দেখা করতে এসে পিটুনির শিকার ভারতের তামিলনাড়ুর যুবক প্রেমকান্ত সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে এতে কী সিদ্ধান্ত হলো, আইনজীবীরা তাকে কী বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, সেই বিষয়টি জানা যায়নি এখনও।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান ও নিশাত ফারজানা নিপার চেম্বারে যান প্রেমকান্ত। সেখানে তিনি আইনি পরামর্শ নেন।
নিশাত ফারজানা নিপা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রেমকান্ত এসেছিলেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলে পরে তিনি চলে যান।’
প্রেমকান্তর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাই তিনি কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে জানা যায়নি।
নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা প্রেমকান্ত বরিশালে আসেন ২৪ জুলাই। তিনি একজন নৃত্যশিল্পীও। জানান, সরকারি বরিশাল মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে তার পরিচয়। মেয়েটির বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলায়।
ওই তরুণী প্রেমকান্তের ভিডিওতে নিয়মিত লাইক ও কমেন্ট করতেন। যুবকের দাবি, ফেসবুকে পরিচয়ের পর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। টানা তিন বছর ধরে চলছে প্রেম। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গেও তৈরি হয়েছে সুসম্পর্ক।
বরিশাল আসার পরদিন দুপুর ১২টায় বরিশালের সরকারি মহিলা কলেজে দুজনের দেখা হয়। দুপুরে শহরের হান্ডি কড়াইয়ে একসঙ্গে খাবার খান। সর্বশেষ দেখা হয় বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে।
পরদিন চয়ন হালদার নামে এক যুবক দাবি করেন, তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে ওই তরুণীর। চয়ন ২৭ জুলাই নগরীর কাশিপুর চৌমাথা এলাকায় পিটুনি দেন প্রেমকান্তকে।
প্রেমকান্তের অভিযোগ, শুধু পিটুনি নয়, তার কাছ থেকে টাকা-পয়সাও ছিনিয়ে নেয়া হয়। আর এ ঘটনার পর প্রেমিকা ও তার পরিবারের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি।
ভাঙা হৃদয় নিয়ে তামিল যুবক অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটনের এয়ারপোর্ট থানায়। সেখানে উল্টো তিন দিন তাকে পুলিশের হেফাজতে থাকতে হয়েছে। তার অভিযোগ, সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ, বরং তাকেই হয়রানি করা হচ্ছে।
এরপর প্রেমকান্ত যান বরগুনায়। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে তালতলী থানায় সেই ছাত্রীর বাবা লিখিত অভিযোগ দিলে।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, অভিযোগে মেয়েটির বাবা বলেছেন, ভারত থেকে আসা ওই যুবক মিথ্যাচার করে তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন।
সেই মেয়েটিও প্রেমকান্তের দেয়া বক্তব্য অস্বীকার করেন। তার ভাষ্য, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে হয় শুধু বন্ধুত্ব।
তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বের একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি প্রত্যাখ্যান করি। সর্বশেষ সে বাংলাদেশে এসে আমার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার কথা জানায়। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দিইনি। এ মাসের শুরুতে সে আমাকে জানায়, দেখা করতে বাংলাদেশ আসবে। আমি তাকে আসতে নিষেধ করি। কিন্তু কোনোভাবেই তা মানতে নারাজ। সে বরিশালে এসে আমি যে কলেজে পড়ি, ওই কলেজের সামনে ঘোরাঘুরি করে খুঁজতে থাকে।’
লোক দিয়ে মারধর করানোর বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে তরুণী বলেন, ‘এসব ডাহা মিথ্যে। আমার সঙ্গে তার দেখাই হয়নি।’
গত ৬ আগস্ট বরগুনা ছাড়েন প্রেমকান্ত। সেদিন জেলার খাজুরতলা বাস টার্মিনাল থেকে বাসে বরিশালের উদ্দেশে রওনা করেছেন তিনি। গাড়ি ছাড়ার আগে উৎসুক মানুষের উদ্দেশে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ভালো থেকো বরগুনা, ভালো থেকো বাংলাদেশ।’