দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা ধারাবাহিকভাবে হামলার শিকার হওয়ার উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার, হামলা ও বিচারহীনতার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চলমান প্রক্রিয়া শঙ্কাজনক অপপ্রয়াসের অব্যাহত প্রবণতা। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাস্তবিক অর্থে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার শেষ হয় না। এটা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের সুরক্ষা নিশ্চিতে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সংগঠনটি অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনায় অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বিশেষ আইনের দাবি জানিয়েছে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অর্থ পাচারসহ নানামুখী দুর্নীতির কারণে দেশের মানুষ বহুমুখী সংকট মোকাবিলা করছে। সেই সময়টাতে দুর্নীতির তথ্য উদঘাটন ও প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’
‘সম্প্রতি চিকিৎসা খাতসহ বিভিন্ন জনসেবা প্রদানকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য সংগ্রহকালে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার সাংবাদিকদের ওপর নৃশংস হামলা হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে দুর্নীতিবাজরা কতটা বেপরোয়া, ক্ষমতাধর এবং সংঘবদ্ধ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো বটেই, রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তৃপক্ষকেই তারা পরোয়া করে না। তারা কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা সুরক্ষা ও দায়মুক্তি পেয়ে থাকে।’
আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্যসূত্রের উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘এ বছরের শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অন্তত ১১৯ জন সাংবাদিক নানামুখী হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের ওপর পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলা হয়েছে। আর ১৯ জন প্রকাশিত সংবাদের দায়ে মামলার শিকার হয়েছেন।
‘বিশেষ করে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহকালে ঢাকা ও বরিশালে অন্তত তিনজন টেলিভিশন সাংবাদিকের ওপর সংঘবদ্ধ ভয়াবহ হামলা হয়েছে। আমরা মনে করি, এসব ঘটনা মুক্ত সাংবাদিকতার সাংবিধানিক অঙ্গীকারকে পদদলিত করছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বিশ্ব দায়মুক্তি সূচক-২০২১ অনুযায়ী সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশের দশম অবস্থান দেশে সাংবাদিকতার প্রকট ঝুঁকির দৃষ্টান্ত। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক-২০২২ অনুযায়ী ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১৬২তম অবস্থানও প্রমাণ করে যে সাংবাদিকতা এদেশে ধারাবাহিকভাবেই কঠিন হয়ে উঠছে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাংবাদিকদের সুরক্ষায় অবিলম্বে বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং তা কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউর (ইউপিআর) অধীনে বাংলাদেশের তৃতীয় পর্যালোচনার সময় সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কিত যে আটটি সুপারিশ সমর্থন করেছিল, সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।
‘অন্যথায় একথা বলা মোটেও অযৌক্তিক হবে না যে, দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রচার থাকলেও বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক অপচেষ্টা চলছে।’