জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং বামপন্থি ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা-ঐক্য পরিষদ।
সোমবার সন্ধ্যায় শাহবাগের গণঅবস্থান থেকে পরিষদের সমন্বয়ক রুহুল আমিন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার রাত থেকে রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী শাহবাগে গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা’র ব্যানারে তাদের এই কর্মসূচি চলছে।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমিন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আমরা কয়েক দিন ধরে শাহবাগে অবস্থান করে যাচ্ছি। এই অবস্থানে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে আগামী শুক্রবার বেলা ৩টায় আমরা গণসমাবেশের ডাক দিয়েছি।
‘সর্বস্তরের মানুষকে এই গণসমাবেশে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি ছাত্রনেতাদের ওপর পুলিশ যে মামলা দিয়েছে অনতিবিলম্বে সেই মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।’
যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের নামে ঢাকা মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দেয়া হবে বলেও জানান রুহুল আমিন।
গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার। এ নিয়ে তীব্র জনঅসন্তোষের মধ্যে বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ দেখান।
রোববার শাহবাগে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে বিরোধ হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। তাদের হাসপাতালেও নিতে হয়।
এ নিয়ে সোমবার হামলার শিকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে পুলিশ। বিকেলে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক পলাশ সাহা শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন।
রুহুল আমিন বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি শুধু অযৌক্তিকই নয়, সম্পূর্ণ গণবিরোধী সিদ্ধান্ত এটি। দেশের বেশির ভাগ মানুষ আজ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সরকার দাম বাড়ানোর একটা কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলছে। অথচ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে এই জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি মূল্য ছিল যেখানে ১৩৭ ডলার, আজ সেই ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯০ ডলারে। অর্থাৎ তেলের দাম যখন কমে যাচ্ছে, আমাদের সরকার তখন দাম বাড়াচ্ছে। সুতরাং তাদের এই যুক্তি কোনোভাবেই টেকে না।’
লিখিত বক্তব্যে রুহুল বলেন, ‘সরকার বলছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মাসে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা লস হয়েছে। এই লস থেকে তারা বের হতে চায়। তাহলে সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ কীভাবে বলে যে ২৩ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের নিট লাভ আছে ১২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা? আমরা যদি ধরেও নেই যে গত ৭ মাসে ৮০১৪ কোটি টাকা লস হয়েছে, তাহলে গত ৭ বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ৪৭ হাজার কোটি টাকা গেল কই?
‘সরকার আরও বলছে, তারা ভারতে জ্বালানি তেল পাচার রোধ করতে দাম বাড়িয়েছে। সংগত কারণেই প্রশ্ন তৈরি হয়, তাহলে সীমান্ত অঞ্চলে আর বিজিবিকে রাখার দরকার কী? এটা কোনো কারণই নয়। সরকার তার লুটপাট ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আজ যে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে, সেই আর্থিক দৈন্যতা দূর করতে জনগণের পকেট কাটার উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে সরকার এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
রুহুল বলেন, ‘আমরা অবস্থানে অনড় থাকব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের গণঅবস্থান চলতে থাকবে।’