কারখানার নেই কোনো অনুমোদন। তার পরও খোলা সয়াবিন তেল ড্রাম থেকে বোতলে ভরে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুরে বিমানবন্দরসংলগ্ন কৃষ্ণপুর গ্রামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
গ্রামের লোকজন জানত কারখানাটি সয়াবিন তেলের। কিন্তু ভেতরে কী হয় সেটি জানত না কেউ। ছিল না কোনো বিলবোর্ড। রাতে থ্রি- হুইলারে করে কারখানায় তেলভর্তি ড্রামের গাড়ি আসে। পরে সেগুলো বোতলজাত করে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ শোনার পর স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে বেনামি সেই কারখানায় যান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। তবে কারখানা পাওয়া যায় বন্ধ।
মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে কারখানার মালিক আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কারখানা বন্ধ বলে জানান।
স্থানীয় একটি দোকানে জিজ্ঞাসা করলে নাম না প্রকাশের শর্তে ওই দোকানদার জানান, গ্রামের সয়াবিন তেলের কারখানার ৪৫০ মিলিলিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি করেন তিনি।
বোতলজাত তেলের নাম ‘রান্নার স্বাদ’। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা ৯৫ টাকা।
গত শনিবার বিকেলে আবারও কথিত সে কারখানায় যান নিউজবাংলার প্রতিবেদক।
গিয়ে দেখা যায়, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। এক দিকে শুধু গ্রিলের গেট হালকা ফাঁকা। কারখানায় নেই কোনো শব্দ, কোলাহল। বাইরে একজনের অনুমতি নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, চার নারী ড্রাম থেকে বোতলে তেল ভরছেন। দুজন ছেলে তেল প্যাকেট করছেন, আর একজন নারী ও একজন পুরুষ সাদা বোতলে কোম্পানির লেবেল আঠা দিয়ে লাগাচ্ছেন।
দেখা যায়, ড্রামের ময়লা তেল একটি প্লাস্টিকের পাইপে পরিশুদ্ধ ছাড়াই স্টিলের নল দিয়ে পানিবাহিত টেপের মাধ্যমে বোতলে ভরছেন নারী শ্রমিকরা।
চারদিকে নোংরা পরিবেশ। মেঝেতে তেল পড়ে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। যে লেবেল বোতলের গায়ে লাগানো হচ্ছে, তাতে আবার বিএসটিআইয়ের লোগো যুক্ত করা হয়েছে।
কারখানার মালিক প্রথমে তার পরিচয় গোপন করেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর জানতে চাওয়া হয় কারখানাটির অনুমোদন আছে কি না। বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কি না। মালিক আশরাফুল ইসলাম কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।
পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করেন বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন তিনি পাননি। অন্য কোনো কাগজপত্রও নেই।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় মাস আগে প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়েছে, এখনও সব প্রক্রিয়াধীন। আর সারা দেশে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই অনুমোদনহীন চলছে, আমারটা চললে সমস্যা কোথায়?’
পরে তিনি তাড়াহুড়ো করে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যান।
তেল বোতলজাত করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, তারা কারখানার কাগজপত্র নিয়ে কিছু জানেন না। তারা দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করেন সেখানে।
স্থানীয় এক ব্যক্তি ফারহান হাবিব বলেন, ‘আমি একদিন রাত ১০টার দিকে তেলের গাড়ি দেখে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করি, এসব ড্রামে কী, কোথায় যাচ্ছে। তারা বলেন আশরাফুলের সয়াবিনের কারখানায় যাবে।
‘তখন আমার সন্দেহ হয়, রাতে কেন ড্রামে ভরে এত তেল নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে আসলে বোতলজাত করা অন্যায়। সেই সঙ্গে মেশিনে পরিশোধন ছাড়াই নোংরা পরিবেশে তেল বোতলজাত করে ক্রেতাদের ধোঁকা দিচ্ছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘যদি সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো কারখানা চলে, তবে সেটি অবৈধ। আমরা খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’