জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে পেটানোর পর তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে পুলিশ। এতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেয়া এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
সোমবার বিকেলে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক পলাশ সাহা শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন।
এতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর ২১ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে বিক্ষোভকারীদের তিনটি বাঁশের লাঠি, সাতটি কাঠের লাঠি ও ১২টি ইটের টুকরা জব্দ করেছে বলেও জানানো হয় মামলায়।
তাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেয়া এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত ও হাড়ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আগের দিন বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে নেতা-কর্মীরা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখার সময় পুলিশের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। তাদেরকে হাসপাতালেও নিতে হয়।
গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার। এ নিয়ে তীব্র জনঅসন্তোষের মধ্যে বামপন্থি কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান।
আসামি যারাএতে প্রধান আসামি করা হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায়কে।
অন্যরা হলেন, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি তৌফিকা প্রিয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শান্তা ও ছাত্র ফেডারেশনের জুবা মনি।
রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ ছাড়া আরও ১১ জনের নাম উল্লেখ আছে আসামি হিসেবে। তারা হলেন, সানি আবদুল্লাহ, জাবিল আহম্মেদ জুবেন, জাওয়াদ, বাঁধন, আদনান, শাহাদাত, ইভান, অনিক, দিয়া মল্লিক, তানজিদ ও তামজিদ৷
পুলিশের কী অভিযোগমামলার এজাহারে বলা হয়, ‘রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার সময় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা বিনা অনুমতিতে বেআইনিভাবে শাহবাগ মোড়ের পাকা রাস্তার ওপর বিক্ষোভ সমাবেশ করার নামে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করেন।
‘পুলিশ তাদের রাস্তার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করে। কিন্তু আসামিরা অনুরোধ অমান্য করেন। এজাহারে থাকা আসামিরা মিছিল ও স্লোগানের মাধ্যমে হাতে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেলসহ ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে।’
এজাহারে বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীদের পুলিশ থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা লাঠিসোঁটা ও ইটের টুকরা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশের ওপর আঘাত করে মারধর করেন৷
‘আসামিদের লাঠির আঘাতে রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার বায়েজীদুর রহমান, সহকারী কমিশনার (প্যাট্রল) বাহা উদ্দীন ভূঞা, উপপরিদর্শক রাশেদুল আলম আহত হন।’
বিক্ষোভকারীদের পিটুনির বিষয়ে এজাজারে বলা হয়, ‘পুলিশ নিজেদের জানমাল ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷’