জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের বিক্ষোভ সমাবেশে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ।
রোববার সন্ধ্যা ৭টায় শাহবাগ মোড়ের পাশে এই হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায়ের অভিযোগ, পুলিশের লাঠিপেটায় তাদের ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা সবাই এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহবাগ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদূত হাওলাদারকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অনিক রায় বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের ব্যানারে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে শাহবাগ যাই। মোড়ের পাশে যে টিভিটা আছে সেটার নিচে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের সমাবেশ শুরু করি। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে তাড়াতাড়ি সমাবেশ শেষ করতে বলা হয়।
‘আমরা তাদের বলি, আমাদের সভাপতির বক্তব্য বাকি। তার বক্তব্যের পর আমরা চলে যাব। ঠিক সে সময় একজন পুলিশ আমাদের এক কর্মীকে আক্রমণ করে বসে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিকে থাকা পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিত লাঠিপেটাসহ হামলা করে। বিনা উসকানিতেই তারা আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে।’
পুলিশের হামলার পর শাহবাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীরা সমাবেশ করেন।
সমাবেশে অনিক রায় বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী সরকার মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। এই বৃদ্ধির মাধ্যমে নানা উসকানি দেওয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী জ্বালানি তেলের ওপর দেওয়া ভর্তুকি কমানো হয়েছে। কৃষিজ পণ্যের ওপর থেকেও ভর্তুকি সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ইউরিয়া সারের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশকে নষ্ট করে দেয়ার ষড়যন্ত্র এটি।’
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রলের দাম ৪৪ ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ডিজেলে লিটারে ৪২ টাকার বেশি লোকসান হতো। দাম বাড়ানোর পর এখনও ৮ টাকার বেশি লোকসান হবে।
জ্বালানি তেলের এত বেশি হারে দাম এর আগে কখনও বাড়েনি দেশে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে একেবারে সাধারণ মানুষ এর সমালোচনা করছে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির সমস্যায় থাকা দেশে নতুন করে পণ্যমূল্য বাড়বে বলে শঙ্কার কথা বলাবলি হচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবহনে বর্ধিত খরচের বিষয়টি আছে।
এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা এবং দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকার যতটা ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে শাহবাগ এলাকায় অবস্থান নেন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখানে হামলার বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায় বলেন, ‘এই হামলার কারণে আমাদের আন্দোলন দমে যাবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হবে।
‘আগামীকাল দুপুর ১২টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল হবে। সেই মিছিল-পরবর্তী সমাবেশ থেকে আমরা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।’