বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কার কাছে বিচার দেবেন বাসযাত্রীরা

  •    
  • ৭ আগস্ট, ২০২২ ১৯:২২

কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া কাটা হচ্ছে না। ওয়েবিলের নামে চলছে ইচ্ছামতো আদায়। খুচরা এক বা দুই টাকার নোটের অভাবে বাস ভাড়ার ক্ষেত্রে ১১, ১২ কিংবা ১৩ বা ১৪ টাকার হিসাব উধাও হয়ে গেছে আগে থেকেই। ফলে ১০ টাকার বেশি কোনো ভাড়া নেয়া হলে সেটি ১৫ টাকা হয়ে যায়। কোনো কোনো বাসে ১০ টাকার বেশি আদায়ের একক ২০ টাকা। যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন এই অত্যাচার।

কামরুল ইসলাম কর্মস্থল মেরুল-বাড্ডায় যেতে মালিবাগ মোড় থেকে বাসে ওঠার পর তার কাছ থেকে ভাড়া চাওয়া হয় ১৫ টাকা। পথের দূরত্ব হবে বড়জোর তিন কিলোমিটার।কেন ১০ টাকার জায়গায় ১৫ টাকা দিতে হবে- কামরুল প্রশ্ন তুললে হেলপার বলেন, ভাড়া বেড়েছে। তখন তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, এই পথের দূরত্বে তিন কিলোমিটার। ফলে নতুন হার আড়াই টাকা হিসাবে ভাড়া আসে সাড়ে ৭ টাকা। আগে ২ টাকা ১৫ পয়সা হিসাবে ভাড়ার সময় সর্বনিম্ন ভাড়া বাবদ ১০ টাকা দিতেন। এবারও তাই দেবেন।

কিন্তু হেলপার মানতেই চাইছিলেন না। তিনি বলতে থাকেন, ১৫ টাকা করে অন্যদের কাছ থেকে আদায় করেছেন। কিন্তু কামরুল ধমক দিলে পরে তিনি ১০ টাকা নেন।

ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করার পর গত নভেম্বরে বাস ভাড়া বাড়ানোর পরও একই নৈরাজ্য দেখা গিয়েছিল। তখন কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা হারে ভাড়া ঠিক করা হয়। কিন্তু আগে থেকেই এর চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছিল। এর পরও ভাড়া আরও বাড়ানোর পর সরকারি হারের চেয়ে আরও বেশি আদায় করা হয়।

এবারও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে যত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, বিভিন্ন রুটে আগে থেকেই তার চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে।

মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি থেকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড হয়ে রামপুরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দূরত্বে আগের হিসাবে ভাড়া আসে ২৩ টাকা ৬৫ পয়সা। নতুন হিসাবে ভাড়া আসে ২৭ টাকা ৫০ পয়সা।

কিন্তু আগে থেকে আদায় করা হচ্ছিল ৩০ টাকা। এখন আরও ৫ টাকা বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে ৩৫ টাকা।

এ তো মোট দূরত্বের হিসাব। বাড়তি ভাড়া আদায়ে কয়েক বছর ধরে ওয়েবিল নামে যে পকেট কাটার উপায় বাসমালিকরা বের করেছেন, সে কারণে স্বল্প দূরত্বে আরও বেশি ঠকছেন যাত্রীরা।

সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করায় আগের হিসাবে এই টাকায় যাওয়ার কথা ৪ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। কিন্তু ইস্কাটন থেকে রামপুরা পর্যন্ত দুটি ওয়েবিল বসিয়ে এরচেয়ে কম দূরত্বে আদায় করা হচ্ছিল ২০ টাকা।এখন ভাড়া বাড়ার পর ওয়েবিল থেকে ওয়েবিল পর্যন্ত ১৫ টাকা করে দাবি করা হচ্ছে ৩০ টাকা।

খুচরা ১ বা ২ টাকার নোটের অভাবে বাস ভাড়ার ক্ষেত্রে ১১, ১২ কিংবা ১৩ বা ১৪ টাকার হিসাব উধাও হয়ে গেছে আগে থেকেই। ফলে ১০ টাকার বেশি কোনো ভাড়া নেয়া হলে সেটি ১৫ টাকা হয়ে যায়। কোনো কোনো বাসে ১০ টাকার বেশি আদায়ের একক ২০ টাকা।

বাসে ভাড়ার চার্ট থাকার যে বিষয়টি বরাবর নির্দেশ আসে, সেটিও প্রতিবার উপেক্ষা করে মালিকপক্ষ। এবারও তাই হয়েছে। আগের মতোই ভাড়ার চার্ট না থাকায় ইচ্ছামতো আদায় করা যাচ্ছে। আর যানজটের নগরে স্বল্প দূরত্ব দীর্ঘ অনুভূত হওয়ায় কোনো জায়গা থেকে অন্য কোথাও দূরত্ব কত, সেটিও বোঝা যায় না।শনিবার রাতে নতুন হারে ভাড়া নির্ধারণের সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, ওয়েবিল অবৈধ। কোথাও এই অভিযোগ থাকলে তাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যবস্থা নেবেন।

গত নভেম্বরেও একই কথা বলেছিলেন তিনি। হুমকি দিয়েছিলেন, ওয়েবিলে চালালে বাসের রুট পারমিট বাতিল করে দেবেন। তবে বাস্তবতা হলো, এই হুমকি কাগুজে হয়ে রয়েছে। স্পষ্টত, তিনি জানেন না ওয়েবিল আছে কি না।

বাস মালিকদের সমিতি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েতউল্লাহ নভেম্বরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ঢাকায় ওয়েবিলে বাস চলবে না। ভাড়া কাটা হবে কিলোমিটার হিসাবে। কিন্তু আগের বহুবারের নানা ঘোষণার মতোই বাস মালিকরা ওয়েবিল মানেননি। যাত্রীরা ঝগড়াঝাটি করে একপর্যায়ে ক্ষ্যান্ত দিয়েছেন।

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কারওয়ান বাজারের দূরত্ব ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার। নতুন হারেও এই পথের ভাড়া আগের মতোই ১০ টাকা রাখার কথা। কারণ দূরত্ব অনুযায়ী হয় ১০ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু রোববার সকাল থেকে আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা।এ নিয়ে বাসের সহকারী ও চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। শ্রমিকদের ভাষ্য, তেলের দাম বাড়ছে, ভাড়া ১৫ টাকা করেই দিতে হবে।

রোববার দুপুরে ইমতিয়াজ মাহমুদ মোহাম্মদপুর থেকে কারওয়ান বাজার আসেন অভিনন্দন পরিবহনের একটি বাসে।

তিনি বলেন, ‘কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা হারে এই দূরত্ব হিসাব করে বাস ভাড়া দিতে চাইলে হেলপার রাজি হয়নি। তার দাবি, এখন ভাড়া ১৫ টাকা। আমরা হিসাব বুঝি না।’কমলাপুর থেকে রামপুরায় নিয়মিত যাতায়াত করা নূর। জানান, বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাসের সহকারীদের সঙ্গে কয়েকজনের তর্ক হয়েছে।রাইদা বাসের সহকারী আলম বলেন, ‘আমাদের মালিক যেভাবে বলে দিয়েছে আমরা সেভাবেই ভাড়া নিচ্ছি।’

প্রতিবার বাস ভাড়া নতুন করে নির্ধারণের পর বাড়তি ভাড়া আদায়ে বিআরটিএ যে ব্যর্থ কৌশলগুলো নিয়ে থাকে, এবারও সেভাবেই কাজ করছে।

এবার বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে রাজধানীতে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।একটি আদালত পরিচালনা করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ আনোয়ার জানান, কিলোমিটারের হিসাবের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ তারা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। যারা কিলোমিটার হিসাবে আড়াই টাকার বেশি করে ভাড়া নিয়েছে তাদের জরিমানা করছি।’

বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধের পাশাপাশি গাড়ির রুট পারমিট ও অন্য কাগজপত্র ঠিক আছে কি না এসব বিষয় দেখা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির তীব্র প্রতিক্রিয়া

রাজধানীতে বাস ভাড়ার নৈরাজ্যের সময় বিআরটিএর কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভাড়া সমন্বয় করার পর মালিকরা কিলোমিটার ধরে হিসাব করেন। কিন্তু আগে যে বাড়তি ভাড়া নিতেন, তার সঙ্গে নতুন করে তাদের মতো বাড়তি ভাড়া ঠিক করে নেন। ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা নেন। ৬০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা নেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি, প্রতিটি স্পটে হিসাব করে ভাড়া সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হোক। গাড়ির ভেতর ডিজিটাল বোর্ড লাগানো হোক। যা দেখে যাত্রী, চালক, সহকারী ও তদরকি সংস্থা সবাই বুঝতে পারবে।’

মোজাম্মেল মনে করেন, ওয়েবিল থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে- বিআরটিএ চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে প্রমাণ হয়, বাস ভাড়া আসলে কী হয়, সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানেই না।

যাত্রীকল্যাণ সমিতির নেতা বলেন, ‘যাত্রীরা যে বাসেই উঠুক তারা ওয়েবিল দেখতে পান। কিন্তু বিআরটিএ চেয়ারম্যান তা জানেন না। এসব কথা শুনে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, বাস মালিকদের সঙ্গে ওনাদের কোনো আঁতাত আছে কি না। নইলে উনি বা ওনার কর্মকর্তারা কেন দেখতে পান না।’

ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নামকাওয়াস্তে অভিযান চালিয়ে বাস ভাড়ার নৈরাজ্য দূর করা যাবে না বলেও মনে করেন মোজাম্মেল। বলেন, ‘মিডিয়ায় যতদিন আলোচনা থাকে, ততদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে তৎপর থাকেন। একই ইস্যুতে দিনের পর দিন নিউজ করাও সম্ভব হয় না। নতুন ইস্যু আসে, আর বাড়তি ভাড়ার কথা সবাই ভুলে যায়।’

এ বিভাগের আরো খবর