ভারতের তামিলনাড়ু থেকে ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে দেখা করতে আসা যুবক প্রেমকান্ত বরগুনা ছেড়েছেন। জেলার খাজুরতলা বাস টার্মিনাল থেকে বাসে বরিশালের উদ্দেশে রওনা করেছেন তিনি। গাড়ি ছাড়ার আগে উৎসুক মানুষের উদ্দেশে প্রেমকান্তকে বলতে শোনা যায়, ‘ভালো থেকো বরগুনা, ভালো থেকো বাংলাদেশ।’
প্রেমকান্তের বরগুনা ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মদ।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার পর বরগুনা সদরে আসেন ভারতীয় ওই যুবক। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে শহরের আলম বোর্ডিং নামের একটি হোটেলে রাখা হয়। শনিবার বেলা ২টার বাসে প্রেমকান্ত বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।’
‘প্রেমের টানে’ ভারত থেকে শুক্রবার বরগুনায় আসেন প্রেমকান্ত। এরপর তালতলী উপজেলার জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে অবস্থান করে ‘প্রেমিকা’র পরিবারের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন।
তালতলী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রেজবী উল কবির জোমাদ্দার বলেন, ‘ওই তরুণ স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি মেয়েটির (কলেজছাত্রীর) মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন। আমি বিষয়টি ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে জানালে তারা যুবকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পুলিশের কাছে যান। পরে প্রেমকান্ত তালতলী থেকে চলে যান।’প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে তালতলী থানায় কলেজছাত্রীর বাবা লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তরুণীর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি দাবি করেছেন, ভারত থেকে আসা ওই যুবক মিথ্যাচার করে তাদের সামাজিক মর্জাদা ক্ষুণ্ন করেছেন।তবে প্রেমকান্তের দাবি, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘মূলত ওই মেয়েটি তার প্রেমিকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে তিন বছর ধরে তার সঙ্গে সম্পর্ক। আমি ওই মেয়েটির আমন্ত্রণেই বাংলাদেশে এসেছি।’প্রেমকান্ত দাবি করেন, ‘২৪ জুলাই বাংলাদেশে তিনি আসেন কেবল প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে। এরপর তিনবার আমাদের দেখা হয়। কিন্তু তার পর থেকেই সে আমাকে এড়িয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু কী কারণে তা আমি জানি না। বিষয়টি বিস্ময়কর। তিন বছরের সম্পর্ক কোনো ছেলেখেলা না।
‘আমি তাকে বিয়ের জন্য জোর করছি না। আমাকে নির্মমভাবে মারা হয়েছে। তারপর আমি চেষ্টা করেছি প্রেমিকার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এতেও ব্যর্থ হয়েছি।’
বরগুনাবাসী তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার বিষয়টি নিয়ে তারাও খুব কষ্ট পেয়েছে এবং মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে।’
কীভাবে সম্পর্কের শুরু এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বরগুনার কলেজপড়ুয়া ওই তরুণীর সঙ্গে আমার পরিচয়। প্রথমে আমার ভিডিওতে নিয়মিত লাইক ও কমেন্ট করত সে। এরপর দুজনের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ হয়। সেখান থেকে প্রেম হয়। তরুণীর পরিবারের সঙ্গেও সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে অনেক আগেই আমি বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আর আসা হয়নি।’
তবে প্রেমকান্তের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়নি বলে দাবি করেছেন ওই তরুণী। তার ভাষ্য, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে হয় শুধু বন্ধুত্ব।
তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বের একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি প্রত্যাখ্যান করি। সর্বশেষ সে বাংলাদেশে এসে আমার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার কথা জানায়। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দিইনি। এ মাসের শুরুতে সে আমাকে জানায়, দেখা করতে বাংলাদেশ আসবে। আমি তাকে আসতে নিষেধ করি। কিন্তু কোনোভাবেই তা মানতে নারাজ। সে বরিশালে এসে আমি যে কলেজে পড়ি ওই কলেজের সামনে ঘোরাঘুরি করে খুঁজতে থাকে।’
লোক দিয়ে মারধর করানোর বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে তরুণী বলেন, ‘এসব ডাহা মিথ্যে। আমার সঙ্গে তার দেখাই হয়নি।’ ওই তরুণী আরও দাবি করেন, ‘‘সে যখন খুব ঝামেলা শুরু করে, আমি অনিরাপদ বোধ করতে শুরু করি এবং এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ তাকে ডেকে নেয়। সেখানে সে এবং আমার বাবা-মাও ছিলেন। পুলিশ প্রেমকান্তকে জিজ্ঞাসা করেছে, তার কোনো অভিযোগ আছে কি না, সে বলেছে ‘না, কোনো অভিযোগ নেই।’ এরপর পুলিশ তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়।’’
থানায় অভিযোগ প্রসঙ্গে তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমরা জানতাম সে ঢাকা থেকে শনিবার ভারতে চলে যাবে। কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার জানতে পারি ওই যুবক তালতলীতে এসেছে। সে তালতলী এসে আমার মেয়েকে আবারও প্রেমিকা দাবি করে এবং নানা ধরনের কথাবার্তা ছড়ায়। আমি স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
তিনি দাবি করেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে ভারতীয় ওই যুবকের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সে এখানে এসেও আমাদের সামাজিক মর্জদা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছে। আমি এ বিষয়ে তালতলী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মেহেদী হাসান বলেন, ‘তিনি যেহেতু অন্য দেশের নাগরিক, আমরা তাকে নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং তাকে বুঝিয়ে ভারতে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছি। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন এবং ভারতে ফিরে যাওয়ার জন্য শনিবার দুপুরে বরগুনা থেকে চলে গিয়েছেন।’