‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি জনজীবনে ভয়ংকর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এর প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাবে। দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
শনিবার এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর এসব কথা বলেন।
ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম হত্যার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ৩১ জুলাই ভোলায় আয়োজিত সমাবেশে পুলিশের গুলিতে আব্দুর রহিম নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নিহত হন। আহত হন ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম৷ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ আগস্ট তিনি মারা যান। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় শনিবার এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়৷
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের জন্য ভয়াবহ দানবে পরিণত হয়েছে। সে জন্য এদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া এখন প্রতিটি দেশপ্রেমিকের একমাত্র কাজ। আর তাদের ক্ষমতা থেকে সরানোর কথা বললেই তারা চক্রান্তের অভিযোগ তোলে।
‘আমরা চক্রান্ত করি না। আমরা প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য জনগণের কাছে যাচ্ছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই রাজপথে এর ফয়সালা করব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নূরে আলম ও আব্দুর রহিমের হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে গুম, খুন আর মিথ্যা মামলা দিয়ে।’
‘গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে রাজনৈতিকভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
‘নুরে আলম ও আব্দুর রহিমের এই আত্মত্যাগ গণতন্ত্রের জন্য চলমান লড়াইকে আরও বেগবান করবে।’
‘রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকার আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। অথচ এতদিন তারা মিথ্যাচার করে এসেছে। আইএমএফের শর্ত খুব কঠিন। তারা বলেছে কোথাও সাবসিডি (ভর্তুকি) দেয়া যাবে না। জ্বালানি তেলে সাবসিডি দেয়া বন্ধ করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে৷ মধ্যরাতে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা দেশের অর্থনীতিতে ভয়ংকর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বেড়ে যাবে পরিবহন ব্যয়। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকার আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে। অথচ এতদিন তারা মিথ্যাচার করে এসেছে। আইএমএফের শর্ত খুব কঠিন। তারা বলেছে, কোথাও সাবসিডি (ভর্তুকি) দেয়া যাবে না। জ্বালানি তেলে সাবসিডি দেয়া বন্ধ করতে হবে।
‘জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন যে জ্বালানি তেলের দাম একটু বাড়ানো হবে৷ তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে৷ অথচ তার কয়েক ঘণ্টা পরই তেলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।’
বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাসের দাম বাড়ানোর উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, দেশের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষ এখন দিশেহারা।
‘আমরা সেই বাংলাদেশ ফিরে পেতে চাই। যে বাংলাদেশের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম। সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ ফিরে পেতে চাই।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জনগণের দাবি আদায় করতে গিয়ে নূরে আলম জীবন দিয়েছেন। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য- ‘হটাও হাসিনা বাঁচাও দেশ। টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদল সভাপতি রওনকুল শ্রাবণ। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।