ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে জেলখানায় মারা যাওয়া বাসচালক জামির হোসেনের স্ত্রী রাশিদা আক্তার জীবন-সংকটে রয়েছেন।
তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে বলে শনিবার নিউজবাংলাকে জানানো হয়েছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে।
বাসচালক জামিরের মেয়ের জামাই ইব্রাহিম বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে আমার শাশুড়ি স্ট্রোক করেন। এরপর তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করি। এর পরও তার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আগের থেকে অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে ভর্তি আছেন।’
বিচারিক আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় নিয়ে ২০২০ সালের ১ আগস্ট কারাগারে মারা যান বাসচালক জামির হোসেন। তার মৃত্যুর পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন জামিরের স্ত্রী রাশিদা আক্তার।
সড়ক দুর্ঘটনায় খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা পান জামির হোসেন।
বিচারিক আদালতে জামির দোষী সাব্যস্ত হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সামছুল হকের একটি অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে, ওই দুর্ঘটনার পেছনে বাসচালক জামিরের কোনো ভুল ছিল না।
সরেজমিন অনুসন্ধান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ড. সামছুল হক বলছেন, সেদিন রাস্তায় সঠিক লেনেই ছিল জামিরের বাস। একটি বাঁকের মুখে মাইক্রোবাসটি আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসার কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা জামিরের বাসটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
সারা দেশকে নাড়া দেয়া ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে ওই সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর ছাড়াও তাদের মাইক্রোবাসচালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন মারা যান। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ আহত হন পাঁচ জন।
দুর্ঘটনার জন্য জামির হোসেনকে দায়ী করে বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন সাজা দেয়ার পাশাপাশি আরেকটি মামলায় তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাস মালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিবাদীদের আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
এ ছাড়া মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে করা ক্ষতিপূরণের আরেকটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।