রাতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর বগুড়ায় সকাল থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে তেলচালিত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকেও কোনো বাস বগুড়ায় আসেনি। এদিকে কয়েকটি পরিবহন এরই মধ্যে বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে।
বগুড়ার চারমাথা ও ঠনঠনিয়া আন্তজেলা বাস টার্মিনালে শনিবার সকালে এ চিত্র দেখা গেছে।
জেলার পরিবহন সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, বাস চলাচলে স্থানীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা বা ধর্মঘট ডাকা হয়নি। চালকরা নিজে থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।
সকালে চারমাথা বাস টার্মিনালে বগুড়া-নগরবাড়ী রুটের বাসচালক নান্টু মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে যেখানে জ্বালানি লাগত ৫ হাজার টাকার, এখন লাগবে ৯ হাজার টাকার। এই বাড়তি ৪ হাজার টাকা আমরা পাব কই। এ জন্য গাড়ি চালানো বন্ধ রাখছি।’
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রুটের চেইন মাস্টার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে আমার রুটে মাত্র ১টি বাস ছেড়ে গেছে, সেটিও গ্যাসের। তেলের কোনো গাড়ি চলাচল করছে না। অন্য রুটগুলোর অবস্থাও একই।’
এরই মধ্যে ভাড়া বাড়িয়েছে ঠনঠনিয়া আন্তজেলা টার্মিনালের কয়েকটি পরিবহনের বাস।
এর একটি হানিফ পরিবহন। ঠনঠনিয়া টার্মিনালের এই পরিবহনের কাউন্টারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টিকিট বিক্রেতা বলেন, ‘আমাদের মালিকপক্ষ থেকে বাস ভাড়া বাড়াতে বলেছে। এ জন্য ঢাকার রুটের ভাড়া ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে।’
বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বগুড়া থেকে অধিকাংশ বাস বাইরে যাচ্ছে না। সকাল থেকেও ঢাকা-চট্টগ্রামের রুটের বাস বগুড়ায় আসেনি। আমরা কোনো ধর্মঘটের নির্দেশনা দেইনি। আবার চালকদের রাস্তায় বাস নামানোর জন্যও বলিনি।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সরকারিভাবে তেলের দাম লিটারে ৩০ টাকার বেশি বাড়ানো হয়েছে। এখন বগুড়ায় আন্ত থানা ও জেলার আটটি রুটে প্রায় এক হাজার বাস চলে। শুধু থানা রুটে একটি বাস আপডাউন করতে অন্তত ৩০ লিটার তেল লাগে। অর্থাৎ প্রায় হাজার টাকার ওপরে বাড়তি খরচ হচ্ছে। কিন্তু ওই পরিমাণ আয় কখনই সম্ভব নয়।’
এ জন্য তেলের দাম কিছু কমিয়ে ভাড়া সমন্বয় করার দাবি জানান তিনি। বলেন, ‘আমরা নিজ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিব না। কেন্দ্রের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। তবে তেলের দাম এত বেশি হওয়া ঠিক হয়নি। সরকার দাম কিছুটা কমিয়ে ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করে দিবে এমনটা আশা করছি।’