বাসভাড়া না বাড়িয়ে হঠাৎ তেলের দাম বাড়ানোয় সাতক্ষীরা থেকে বেশির ভাগ দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা। শনিবার সকালে কিছু বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেলেও অধিকাংশ যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারে অপেক্ষার পর বাস পাচ্ছেন না।
এদিকে অগ্রিম টিকিট কেনা যাত্রীদের কাছ থেকেও আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে নতুন টিকিট দেয়াও। এতে বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা।
জেলার আঞ্চলিক রুটেও বাসের সংখ্যা কমেছে। এসব বাসেও ইচ্ছামতো বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি তাহমিদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসভাড়া সমন্বয় না করেই সরকার হঠাৎ করে তেলের দাম বৃদ্ধি করায় মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। লস করে এই মুহূর্তে যাত্রী সেবা দেয়া সম্ভব নয়।
‘এ ছাড়া ধর্মঘটের বিষয়ে মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। কেউ কেউ আপাতত টিকিট বিক্রি ও বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তবে কোনো পরিবহন যদি চলাচল করে তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে না।’
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।
সাতক্ষীরায় আগে থেকে টিকিট কেনা যাত্রীদের কাছ থেকেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
ঢাকার গাজীপুরে কর্মরত বাসযাত্রী ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ছুটিতে সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে এসেছিলাম। রোববার সকালে অফিস করা লাগবে, সে জন্য শনিবার ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনে অগ্রিম টিকিট কেটেছি।
‘সকালে কাউন্টারে আসার পর কাউন্টার ম্যানেজার বলছেন, বাড়তি ১০০ টাকা দিতে হবে, না হলে বাস যাবে না। আমিসহ অন্য যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি।’
একই অভিযোগ ঢাকাগামী যাত্রী আবু রায়হানের। তিনি বলেন, ‘৭০০ টাকার টিকিট ৮০০ টাকায় দিতে হয়েছে। সকাল থেকে অনেক বাস সাতক্ষীরা ছেড়ে যায়নি। নতুন টিকিট বিক্রি বন্ধ। আগে যাদের টিকিট কাটা ছিল, শুধু তারা বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় যেতে পারছেন।’
অন্য বাস কাউন্টারগুলোতেও একই অবস্থা। অগ্রিম টিকিট কেনা যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে সকালে কিছু বাস ছাড়া হয়েছে। সকাল থেকে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে অনেক যাত্রী বাড়ি ফিরে গেছেন।
সকালে টিকিট কিনতে আসা যাত্রী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে ঢাকায় যাব বলে টিকিট নিতে এসেছিলাম। কিন্তু বেশির ভাগ কাউন্টার টিকিট বিক্রি করছে না। যারা বিক্রি করছে তারা ইচ্ছামতো বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।’
পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভাড়া না বাড়িয়ে হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে তারা লোকসান দিয়ে যাত্রী পরিবহন করবেন না।
বাসচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মালিক মহাজন যদি বাস চালাতে না দেয়, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই। পরিবহন ভাড়া না বাড়িয়ে হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধি করা উচিত হয়নি। এতে যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগে পড়বে, তেমনি কাজ বন্ধ থাকায় আমরাও কষ্টে থাকব।’
এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মিলন কুমার রায় বলেন, ‘মালিকপক্ষ থেকে বাস বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আপাতত আমাদের টিকিট বিক্রি বন্ধ। তবে যারা গতকাল টিকিট কিনেছেন তাদের জন্য ১০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিয়ে সকালে কয়েকটি বাস ছাড়া হয়েছে। মালিক সমিতি থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর টিকিট বিক্রি শুরু হবে।’
সাতক্ষীরা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নেতা সাইফুল করিম সাবু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আঞ্চলিক রুটে অল্প কিছু বাস চলাচল করছে। হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে কেউ কেউ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
‘আশা করছি, সরকার এ বিষয়ে আমাদের নেতাদের সঙ্গে বসে ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে। তখন এই সমস্যা থাকবে না। তবে আমরা ধর্মঘটের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’