জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সরকারি ঘোষণার পর সকাল থেকে মাগুরা জেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাসের দেখা মিলছে না। দু’একটি পরিবহনের বাস আসলেও সেগুলোর ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
টার্মিনালে কম বাস ও ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে একাধিক বাসের কাউন্টার মাস্টার জানিয়েছেন মালিক পক্ষের নির্দেশেই ভাড়া বেশি নেয়া নেয়া হচ্ছে।
মাগুরা জেলা সদরের টার্মিনালের ঈগল কাউন্টারের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ছয়টি ট্রিপ ছিল। সেখানে বাস আসছে মাত্র একটি। তেলের দাম বাড়ায় মালিকপক্ষ নতুন সিদ্ধান্ত না নিলে এ পরিস্থিতিত স্বাভাবিক হবে না।’
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।
শতকরা হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ৫১ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে জেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাস আসছে কম। এর মধ্যে যেগুলো আসছে, এসব বাসে ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
ঢাকাগামী যাত্রী মিনারা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাভার যাব, মেয়ে হাসপাতালে। আমার দুই ছেলেসহ এসেছি আধা ঘণ্টা। বাস পেলেও ভাড়া ১৫০ টাকা বেশি। তিনজনে এত ভাড়া দিয়ে যাব কীভাবে। তেলের দাম বাড়িছে বলে এই অবস্থা, তা তো জানি না। টাকা তো বেশি নেই।’
আরেক যাত্রী জামাল হোসেন বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাব। কিন্তু ভাড়া নিচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। কেউ কিছু বলছে না। কীভাবে এত টাকা দিয়ে যাব তাই ভাবছি।’
বাসের সংখ্যা কম ও ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে শ্যামলি পরিবহনের কাউন্টার সহকারী জালাল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাস আসছে কম। সকাল থেকে তিন ভাগের এক ভাগও আসেনি; যাত্রীরা টিকিট কেটে বসে আছে।
‘আপাতত ঘোষণা ছাড়াই ভাড়া ১০০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। তেলের এত দাম যে, কিছু করার নেই।’
দ্রুতি পরিবহন কাউন্টারের মাসুদ শেখ বলেন, ‘বাস তো নিয়মিত নেই। দূর পাল্লার বাস ছাড়া লোকাল বাস চলছে না। যারা প্রয়োজনে যাবেন, তারা বাসের অপেক্ষায় বসে আছেন।’
মালিক পক্ষের সিদ্ধান্তেই ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে জানিয়ে জে লাইন পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার ইমদাদ হোসেন বলে, ‘সব পরিবহনে ১০০ থেকে ২০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। ৫০০ টাকার ভাড়া এখন ৭০০ টাকা অনেকে নিচ্ছেন। এটা মালিপক্ষের সিদ্ধান্ত। কিছুই করার নেই।’
রয়েল, হানিফ, সোহাগ কাউন্টারের সহকারীরা জানান, খুলনা থেকে বাস আসছে হাতে গোনা। যেখানে আধা ঘণ্টা পরপর বাস নিয়মিত ছেড়ে যেত, সেখানে সকাল থেকে বাস ছাড়া হচ্ছে অনিয়মিত।
মাগুরা বাস-ট্রাক শ্রমিক সমিতির সভাপতি ইমদাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মালিক পক্ষ আমাদের ফোন করে বলেছে বাসের সংখ্যা যেহেতু কম, সে জন্য ভাড়া বেশি নিতে।
কী পরিমাণ ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাগুরা থেকে ঢাকা যেতে পরিবহনগুলো ৫০০ টাকার ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এসি বাসগুলোতে নিচ্ছে ২০০ টাকা বেশি।
‘লোকাল পরিবহন, যেগুলো মাগুরা থেকে উপজেলা পর্যায়ে চলাচল করে এবং যশোর, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর যায়, সেগুলোর ভাড়া রুট ভেদে ৪৫ থেকে ৭০ টাকা করে বেশি নিচ্ছে।’