বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়ে এসেছে জানিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, চলতি বা আগামী মাসেই এই ঘোষণা হতে পারে। চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি থেকে উত্তরণও আগামী মাস থেকেই হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ব বাজারের দরের বিবেচনায় বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি। তবে এ ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগের বিষয়টিও সরকারের মাথায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর বারিধারার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দরে লাফ দেয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে সরকার গ্যাস কেনা বন্ধ করার পর থেকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেখা দিয়েছে ঘাটতি। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দর বাড়ার কারণে ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও বন্ধ রাখা হচ্ছে।
জুলাইয়ের ১৮ তারিখ সংবাদ সম্মেলনে এসে সূচি করে লোডশেডিং দেয়ার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। আর দুই সপ্তাহ পর গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বললেন দাম বাড়ানোর কথা।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শেষবিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিষয়টি বিইআরসির (এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) এখতিয়ারে। তারা গণশুনানি গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম শেষ করে এনেছে। চলতি অথবা আগামী মাসে দর ঘোষণা করতে পারে।’
লোডশেডিং নিয়ে অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
১৮ জুলাই প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং হবে। পরে জানানো হয়, এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী ঘোষণা দেয়া হবে। এরপর কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে-সেই সূচিও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, লোডশেডিং সেই সূচি মেনে হচ্ছে না।
শহরের পরিস্থিতি তাও তুলনামূলক ভালো, তবে গ্রাম এলাকায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা, কোথাও তার চেয়ে বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। আর এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি দেশজুড়ে বিক্ষোভও করছে।
বিএনপি আমলে বিদ্যুতের করুণ চিত্রের বিষয়টি স্মরণ করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো বিএনপির মতো অন্ধকার যুগে চলে যাইনি। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ লোডশেডিং করছে। রাজধানীতে এর ফলাফল ভালো শৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে গ্রামাঞ্চলে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এক ঘণ্টার লোডশেডিং ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত গড়াচ্ছে।’
সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা বিদ্যুতের যাওয়া আসার কারণে তাদের ক্ষতির বিষয়টি সামনে আনছেন। রাত ৮টায় দোকার বন্ধের যে সিদ্ধান্ত, সেটি পাল্টানোর অনুরোধ করছেন।
তবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা চাইলেও রাত ৮টার পরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই চালু রাখা সম্ভব নয়। তা হতেও দেয়া হবে না।’
তিনি সবাইকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করতেও অনুরোধ করেন। জানান, ব্যাটারিচালিত যানবাহনে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। এসব ব্যাটারি স্বল্প সময়ে চার্জ হওয়ায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদেরও অপ্রয়োজনীয় গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশও দেন। বলেন, ‘চলমান লোডশেডিংয়ের সুফল জানতে সময় লাগবে। এর ফলে কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হলো তা বুঝতেও সময় লাগবে।’
তেল-গ্যাসের দামও বাড়ানো দরকারঅন্য এক প্রশ্নের উত্তরে নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্ববাজার অনুযায়ী দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর দরকার।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পেট্রল, অকটেন নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই, মাথাব্যথার কারণ হয়েছে ডিজেল। ডিজেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পরিবহন সেক্টরে। সেদিকটাও সরকার বিবেচনা করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখানে কোনো ভর্তুকি নেই, সব লোকসান দিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
গত কয়েক মাসে বিপিসির লোকসান ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দাম সমন্বয় করার কথা চিন্তা করছি। তবে তা জনগণের সহনীয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা হবে। সরকার একটি মেকানিজম বের করার চেষ্টা করছে, যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেলে এখানেও বৃদ্ধি পায়। আবার কমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে।’
জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজার তো এখন পড়তির দিকে- এমন মন্তব্যের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কতটা কমেছে সে বিষয়টি বুঝতে হবে। দর উঠেছিল ১৭০ ডলারে, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ ডলার। ৭৯ ডলারের ওপরে গেলে লোকসান দিতে হয়।’
অবশ্য বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কখনও ১৭০ ডলারে ওঠেনি। আর অশোধিত তেলের দর এখন ১০০ ডলারের নিচে নেমেছে।
তবে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কি না, সেটি নিশ্চিত করেননি তিনি। বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগ হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার মনে করছে আপাতত নির্বাহী বিভাগের হাতে থাকলেই ভালো (দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত)।’
গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে অনেক দাম বেড়ে গেছে, এখন আবার সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাস কিনতে কয়েকটি দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দেশ হতে পারে কাতার। তবে তা বাস্তবায়নে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে।’