১১ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় অচেতন পড়ে আছেন সামিরা ইসলাম। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন সামিরার কিডনি, লিভারসহ শরীরের কয়েকটি অঙ্গ কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গত ২৬ জুলাই সামিরাসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ঘর থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেয়ার পর ওই দিনই মারা যান সামিরার বাবা রফিকুল ইসলাম ও ভাই মাইকুল ইসলাম। তারা সবাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। সম্প্রতি দেশে ফিরে ওসমানীনগরের একটি ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন।
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন সামিরার মা হোসনে আরা বেগম ও আরেক ভাই সাদিকুল ইসলাম। সুস্থ হয়ে ওঠায় গত বুধবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয় তাদের। ওই দিনই ওসমানীনগরের তাজপুর এলাকার সেই বাসায় ফিরে যান মা ও ছেলে।
এদিকে ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। হোসনে আরা ও তার ছেলে বাসায় ফেরার পর আবার ঘটাস্থল পরিদর্শনে যান সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। তবে এখনও ধারণার ওপর ভিত্তি করেই তদন্ত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
সামিরার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ওসমানী মেডিক্যালের উপপরিচালক আবদুল গাফ্ফার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৬ জুলাইয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত সামিরার জ্ঞান ফেরেনি। এর মধ্যে একবার হার্ট অ্যাটাকও হয়েছে তার। তাছাড়া তার কিডনি, লিভারসহ কয়েকটি অঙ্গ কাজ করছে না। ফলে সামিরার অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন।’
সামিরার মা ও ভাই সাদিকুল এখন অনেকটা সুস্থ জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মা ও ছেলেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। তবে তাদের আরও কিছুদিন নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।’
এদিকে একসঙ্গে পাঁচজনের অচেতন হয়ে পড়া ও দুজনের মৃত্যু নিয়ে এবার নতুন তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি ওই বাসা পরিদর্শন ও সুস্থ হয়ে ফেরা মা-ছেলের সঙ্গে কথা বলার পর পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘২৫ জুলাই রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর ছেড়ে ঘুমিয়েছিলেন ওই পরিবারের সদস্যরা। জেনারেটর চালুর পর রফিকুলের ছেলে মাইকুল ইসলামের শ্বাসকষ্ট হয়।
‘বাসায় জেনারেটর চালু করে পুলিশও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। এই জেনারেটরে প্রচুর ধোঁয়া ও শব্দ হয়।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘটনার রাতে দীর্ঘ সময় জেনারেটর চালু থাকায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পেরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত এটা আমাদের ধারণা। এখনও কিছু নিশ্চিত হতে পারিনি।’
জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরনের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আলামত পাঠানা হয়েছে জানিয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘মারা যাওয়া পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও বাসা থেকে জব্দ করা খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। এগুলো এলে তদন্ত অনেকটা এগুতো।’
গত ২৬ জুলাই সিলেটের ওসমানীনগরে তাজপুর স্কুল রোডের একটি বাসা থেকে এক পরিবারের পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেয়ার পর রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ জুলাই রাতে নিহত রফিকের শ্যালক দিলোয়ার হোসেন ওসমানীনগর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন রফিকুল ইসলাম। অসুস্থ ছেলে সাদিকুল ইসলামকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য গত ১২ জুলাই দেশে ফেরেন তারা। এক সপ্তাহ ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা শেষে ১৮ জুলাই উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অরুনধোয় পাল ঝলকের মালিকানাধীন বাসার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেন।