টাঙ্গাইলে নৈশ কোচে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন, মো. আব্দুল আউয়াল ও মো. নুরনবী।
৩০ বছর বয়সী আউয়ালের বাড়ি কালিয়াকৈরের কাঞ্চনপুর গ্রামে। ২৬ বছর বয়সী নুরনবীর বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধোনারচর পশ্চিমপাড়া গ্রামে। তিনি বর্তমানে কালিয়াকৈরের শিলাবহ পশ্চিমপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে কালিয়াকৈরের টান সূত্রাপুর এলাকা থেকে আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সকাল ৯টার দিকে নুরনবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিকালে ছিনিয়ে নেয়া দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার তার কার্যালয়ে শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজনকে আগামীকাল আদালতে তোলা হবে।’
সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, রিমান্ডে থাকা আসামি রাজা মিয়ার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে অভিযানে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভোরে আগে আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সকাল ৯টার দিকে নুরনবীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ডাকাত দলের সদস্য রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তার কাছ থেকে বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে লুট করা ৩টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। বিকেলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
তিনি আরও জানান, বাস ডাকাতির শুরুতে রাজা ঈগল এক্সপ্রেস বাসের চালককে সরিয়ে নিজে চালানোর দায়িত্ব নেন। পরে ভোররাতে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় যাত্রীসহ বাসটি ফেলে ডাকাতির মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান।
ডাকাতি ও সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় বাসের যাত্রী হেকমত আলী অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
পুলিশের বর্ণনায় যা ঘটেছিল
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোডে জনতা নামক খাবার হোটেলে যাত্রা বিরতি করে। সেখানে ৩০ মিনিটের মতো বিরতি শেষে বাসটি ফের ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
পথে তিনটি স্থান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজন করে মোট ১২ জন ডাকাত যাত্রীবেশে বাসে ওঠেন এবং পেছনের দিকে খালি সিটে বসেন।
যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) পার হওয়ার আধা ঘণ্টা পর (রাত দেড়টার দিকে) টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকায় ডাকাতরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ছুরি, চাকুসহ দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাসের চালককে সিট থেকে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে পেছনে সিটের নিচে ফেলে রাখে।
টহল পুলিশের কাছে ধরা পড়া এড়াতে তারা বাসটিকে গোড়াই থেকে ইউটার্ন করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে ডাকাত দল বাসটির জানালার পর্দা ও যাত্রীদের পরনের বিভিন্ন কাপড় ছিঁড়ে চোখ এবং হাত বেঁধে ফেলে।
পরে ডাকাতরা বাসের ২৪ যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। বাসের এক নারীকে পাঁচ-ছয়জন ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় বাসের যাত্রী হেকমত আলী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।
এসপি জানান, ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি লোমহর্ষক এবং চাঞ্চল্যকর হওয়ায় পুলিশ গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। টাঙ্গাইলের একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ত্রিশোর্ধ্ব রাজা মিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা এলাকার বাসিন্দা বলে জানান এসপি। বলেন, রাজা টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। বুধবার রাতে টাঙ্গাইল শহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাই করা তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
রাজা মিয়া টাঙ্গাইল-চন্দ্রা পথে চলাচলকারী ঝটিকা পরিবহনের বাসের চালক। বাসটির মূল চালক মনিরুল ইসলাম মনিরকে সরিয়ে রাজা মিয়া বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেন। প্রায় প্রায় ৩ ঘণ্টা সেটি তার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তিনি আরও জানান, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার ও বাসযাত্রীদের কাছ থেকে ডাকাতি হওয়া মালামাল উদ্ধারে অভিযান চলছে।