অনাবৃষ্টি ও শ্রমিক সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে মেহেরপুরের পাটচাষিদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়েও ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় ভাড়া করা পুকুরে পাট জাগ দেয়াসহ শ্রমিক সংকটে মজুরি বেড়ে যাওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় চাষিদের।
এত ভোগান্তির পরও বর্তমানে পাটের বাজারদর ভালো থাকায় হাসি ফুটেছে জেলার চাষিদের মুখে।
জেলার কয়েকজন কৃষক জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর তাদের এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। এদিকে প্রতি বিঘা জমিতে সাড়ে ১০ থেকে সাড়ে ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়। বতর্মানে প্রতি মণ পাট ২৫০০ থেকে ২৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যে এ বছর জেলায় ২২০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ দশমিক ৬ টন। এ হিসাবে জেলায় এবার ৭৯ হাজার ২০০ টন পাট উৎপাদন হবে।
বৃহস্পতিবার জেলার বাণিজ্যকেন্দ্র খ্যাত বামন্দী ও গাংনী এলাকার কয়েকটি পাটের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, মান ভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত। দাম ভালো হওয়ায় খরচ বাদে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। তাই পাট বিক্রি করে খুশি তারা।
বামন্দীর পাটচাষি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর সাড়ে ১১ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। বিঘায় পাট হয়েছে ১১ মণ। দাম পেয়েছি ২৭ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে ১৬ হাজার টাকা লাভ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি মণ পাটে খরচ হয়েছে এক হাজার টাকার মতো। আর বিক্রি করেছি দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে। লাভ হয়েছে দেড় গুণ।’
ঝোরাঘাট এলাকার পাটচাষি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় শুরু থেকেই চার বিঘা জমির পাট নিয়ে বিপদে ছিলাম। দুই বিঘার পাট জাগ দেয়া শেষে বৃহস্পতিবার বিক্রি করেছি। প্রতি মণ পাট বিক্রি করেছি দুই হাজার ৫৫০ টাকা করে। দাম ভালো পাওয়ায় সব কষ্ট ভুলে গেছি।’
আরিফুল ইসলামের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে চাষি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘পাট ঘরে তোলা নিয়ে এ বছর শঙ্কায় ছিলাম। শ্রমিক সংকট, নেই পানি। বতর্মান বাজারদর ভালো হওয়ায় সব কষ্ট দূর হয়েছে।’
বাজারে নতুন পাটের আমদানি কম তবে চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন পাট ব্যবসায়ী একরামুল হক। বলেন, ‘নতুন পাট প্রকার ভেদে ২৬০০ থেকে ২৭০০ টাকা মণ বিক্রি চলছে। জাগ দেয়া ও শ্রমিক সংকটের কারণে চাষিরা বাজারে পাট আনতে দেরি করছেন। এর ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় পাট কম পাওয়া যাচ্ছে।’
মেহেরপুর কৃষি বিভাগের উপপরিচালক সামসুল আলম বলেন, ‘জেলায় এ বছর পাট চাষ হয়েছে ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর জেলায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও বাজারদর ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এতে করে পাট চাষে তাদের আগ্রহ বাড়বে।’