ভোলায় বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে নিহত জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
ভোলা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড চরনোয়াবাদ খেয়াঘাট সড়কে তার নিজ এলাকার আলতাজের রহমান কলেজ মাঠে হাজারো মুসল্লির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ভোলা দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল বাশার আব্দুর রহিম জানাজা পরিচালনা করেন।
এর আগে রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা থেকে ভোলায় এসে পৌঁছে নুরে আলমের মরদেহ। এ সময় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শত শত নেতাকর্মী এবং শোকাহত সাধারণ মানুষ নিহত নুরে আলমকে এক নজর দেখতে ও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমান দলীয় কার্যালয়ের সামনে।
পরে ভোলা শহরের ইলিশা বাসস্ট্যান্ডে আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা নেতাকর্মীরা মিছিলসহ বিএনপির জেলা কার্যালয়ে নুরে আলমের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে আসে। পরে সেখানে দলীয় নেতারা শ্রদ্ধা জানান।
জানাজায় ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম), ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ভোলা জেলা বিএনপি সভাপতি আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য হায়দার আলী লেলিন, কেন্দ্রীয় যুবদল সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা কাজি মোক্তার হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ মাহামুদ জুয়েল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ট্রু ম্যান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোপানসহ স্থানীয় নেতারা।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিমের রক্তে ভোলার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। নুরে আলম দলের জন্য নয়, এই দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণে রক্তাক্ত ও জখম হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
‘এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেউ নিরাপদ নয়। সরকারের অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করতে যাবে তাকেই সরকারের বাহিনী পুলিশ গুলি করে আলম, রহিমের মতো হত্যা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নুরে আলম জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য নিজের জীবন দিয়ে যে ত্যাগ শিকার করেছেন আমরা তা বৃথা যেতে দেব না। গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেব।’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘নুরে আলমের ৫ বছরের মেয়েশিশু তার পিতাকে হারিয়েছে, স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, মাতা-পিতা তার সন্তানকে হারিয়েছে, ভাই তার ভাইকে হারিয়েছে। আজ পুরো পরিবার শোকাহত। আমরা তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন নুরে আলমের শিশুকন্যাকে নিজ হাতে লালন-পালন করেন। তার পরিবারকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করেন। শহীদ নুরে আলমের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।’
লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৩১ জুলাই বিক্ষোভ সমাবেশ করে ভোলা জেলা বিএনপি। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হন। এ ঘটনায় বিএনপির আরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে নুরে আলমও ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেলে তিনি মারা যান।