টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনার পর যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ কাউন্টারে বাসে অবস্থান করা যাত্রীদের ভিডিও ধারণ করার নিয়ম চালু থাকলেও এখন সেটি ঠিকমতো চর্চা করা হয় না বলে জানা গেছে। এ ছাড়া কাউন্টার ছাড়া সড়ক থেকে যাত্রী তোলার অভিযোগ আছে দূরপাল্লার বাসগুলোর বিরুদ্ধে।
ভিডিও ধারণ করা কেন হয় না, জানতে চাইলে শ্যামলী পরিবহনের (এনআর) পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৬ সাল পর্যন্ত ভিডিও করার ব্যবস্থা ছিল। মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এই ভিডিও করত। কিন্তু এখন বিভিন্ন জায়গা যেমন সাভার, আশুলিয়ায় নগরায়নের কারণে সেখানে কাউন্টার হয়েছে। ফলে এক যায়গায় ভিডিও কার্যকর হচ্ছে না। আমাদের গাবতলী কাউন্টারের পরে অনেকগুলি কাউন্টার আছে। কোনটাকে আমরা শেষ ধরব?’
ঈগল পরিবহনের ম্যানেজার নাজির আহম্মেদ জিতু জানান, যে বাসে ডাকাতি হয়েছে, সেটা ঈগল পরিবহনের নয়।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ওইটা ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন। আমাদেরটা ঈগল পরিবহন। তারা ঈগল পরিবহনের নাম ব্যবহার করেছে। আরেকটা আছে ঈগল পরিবহন ফুলঝুড়ি। এটাও আমাদের না।’
কোনো গন্তব্যের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আগে সর্বশেষ কাউন্টারে যাত্রীদের ভিডিও ধারণ করে রাখা হতো। এখন কেন ভিডিও ধারণ করে রাখা হয় না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মালিক সমিতির নির্দেশে এক সময় এটা করা হতো। তিন-চার বছর আগে তা বন্ধ হয়ে গেছে। মালিক সমিতির প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন উদ্যোগ নেয়া হয় না। তবে কাউন্টার ছাড়া আমরা যাত্রী তুলি না। যদি কোনো অভিযোগ আসে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেই।’
গ্রিনলাইন পরিবহনের ম্যানেজার মো. সম্রাট নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রীদের ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখার বিষয়টা এখনও চালু আছে আমাদের। ক্যামেরাসহ আমাদের লোক থাকে। গ্রিন লাইনে কখনই সিকিউরিটির অভাব ছিল না।’
কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠানোর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাসিক গাড়িতে কিছু কমিশন কাউন্টার আছে। ক্লাসিকের জন্য রাস্তা থেকে এক-দুই জন যাত্রী ওঠে। তা ছাড়া সর্বশেষ যাত্রী ওঠে আরামবাগ থেকে।’
কাউন্টার ছাড়া কেন যাত্রী নেয়া হয়, জানতে চাইলে ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের মালিক সোলায়মান হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাউন্টার ছাড়া যাত্রী নেয়া পুরাপুরি নিষেধ। তারা কেন কাউন্টার ছাড়া যাত্রী নিলো, সেটা আমি জানি না। গাড়ির তিন জন স্টাফই মধুপুর থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক আছেন।’
কাউন্টার ছাড়া বাস থামিয়ে যাত্রী নেয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে না। কাছিঘাটা পর্যন্ত শেষ কাউন্টার। এর পর সিরাজগঞ্জ রোডে গাড়ি চেক হয়। ওরা যাত্রী চেকের পরে নিয়েছে।’
এই দুর্ঘটনায় কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী ব্যবস্থা নেব? ক্ষতি তো আমারও কম হয় নাই। আমি কার কাছে কি চাব, সেটা নিয়েই পেরেশানিতে আছি।’
ভিডিও ধারণ করে রাখার নিয়ম পালন না করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমার দায়িত্ব না। এটা প্রশাসন রাখবে। প্রশাসন আগে চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে ভিডিও করে রাখত। এই নিয়ম অনেক বছর হলো উঠে গেছে।’
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ভিডিও ধারণ এখনও চালু আছে।’
বাস কর্তৃপক্ষ চালু নেই বলে জানিয়েছে জানানো হলে মহাসচিব বলেন, ‘কে বলতেছে বন্ধ আছে? যারা ভিডিও করে না, তারা বলছে বন্ধ আছে। কেউ কেউ করে না, অনেকেই করে।’
যারা ভিডিও করে না তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়, জানতে চাইলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ব্যবস্থা নেবে তো প্রশাসন। আমরা সার্কুলার দেই, নির্দেশনা পাঠাই।’