মহাসড়কে চলন্ত বাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে সারা দেশে।
কুষ্টিয়া থেকে মঙ্গলবার রাতে ছেড়ে আসা বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর একদল ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে সব যাত্রীকে বেঁধে ফেলে। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা ও গয়না লুট করার পাশাপাশি এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বাসটি ঈগল পরিবহনের ছিল বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাসটি ঈগল এক্সপ্রেস নামের আরেকটি কোম্পানির। এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারেও বাসের নাম ঈগল এক্সপ্রেস লেখা।
ডাকাতির মুখে পড়া বাসটিতে রাস্তা থেকে তিনবার টিকিটবিহীন যাত্রী তোলা হয় বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। তিন দফায় তোলা এই ১২ জনই ডাকাত দলের সদস্য বলে মনে করছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রাজা মিয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
রাজার বাড়ি কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামে। টাঙ্গাইল-ঢাকা সড়কে ঝটিকা বাসের চালক রাজা টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি এবং এর চালক মনিরুল, সুপারভাইজার রাব্বী ও সহকারী দুলাল পুলিশের হেফাজতে আছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ছেড়ে যায় বাসটি। সেটি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ভেড়ামারা, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যায়।
মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে বাসটি ঈগল এক্সপ্রেস কোম্পানির বলে উল্লেখ করা হয়েছে
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ডাংমড়কা বাজারে ঈগল এক্সপ্রেসের দুটি কাউন্টার রয়েছে। এর একটি পরিচালনা করেন রাকিবুল ইসলাম। জুতার দোকানের পাশাপাশি তিনি কমিশন ভিত্তিতে বাসের টিকিট বিক্রি করেন।
রাকিবুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাসটি কুষ্টিয়া শহরে যায় না। এটি দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কাউন্টার থেকে যাত্রী নেয়। এ জন্য প্রাগপুর, তারাগুনিয়া, হোসেনাবাদ, আল্লারদরগা, ভেড়ামারাসহ বিভিন্ন এলাকায় টিকিট বিক্রির কাউন্টার আছে।’
রাকিবুলের দাবি, নির্দিষ্ট কাউন্টার ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে বাসে যাত্রী তোলা নিষেধ। তারপরেও বাসের চালক ও সহকারী রাস্তা থেকে যাত্রী তুলে সেই ভাড়া নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। বাস কর্তৃপক্ষ কখনো প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের চাকরি চলে যায়।
রাকিবুল বলেন, ‘সাধারণত নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কারখানায় যারা চাকরি করেন তারা এই বাসে যাতায়াত করেন। ঈগল এক্সপ্রেসের মালিক সোলায়মান হকের বাড়ি পাবনা।’
ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটিতে নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে এর মালিক সোলায়মান হককে প্রশ্ন করেছে নিউজবাংলা।
জবাবে তিনি বলেন, ‘কাউন্টার ছাড়া যাত্রী নেয়া পুরোপুরি নিষেধ। তারা (চালক-সুপারভাইজার-সহকারী) কেন কাউন্টার ছাড়া যাত্রী নিল, সেটা আমি জানি না।’
তিনি বলেন, ‘এই রুটে কাছিঘাটা পর্যন্ত শেষ কাউন্টার। এর পরে সিরাজগঞ্জ রোডে গাড়ি চেক হয়। ওরা চেকের পর যাত্রী তুলেছে।’
এ ঘটনার পর ‘খুব পেরেশানিতে’ আছেন বলে দাবি করেন সোলায়মান হক। বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের ভিডিও করে রাখার নিয়ম অনেক দিন ধরে বন্ধ আছে বলেও তিনি জানান।
ঈগল নাম দিয়ে চলছে আরও দুটি কোম্পানির বাস
আসল ঈগলের নামে চলছে আরও দুটি কোম্পানি
ঈগল পরিবহনের নাম যুক্ত করে আরও দুটি কোম্পানি দেশে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। অন্য দুটি কোম্পানি হলো ঈগল এক্সপ্রেস ও ঈগল ফুলঝুড়ি। এসব পরিবহনে ঈগল নামটি অনেক বড় করে থাকায় নামের ছোট অংশটি অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যায়।
ঈগল পরিবহনের ব্যবস্থাপক নাজির আহম্মেদ জিতু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে গাড়িতে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেটি ঈগল পরিবহনের নয়। ওটা আসলে ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন।
‘আমাদেরটা ঈগল পরিবহন। তারা ঈগল পরিবহনের নাম ব্যবহার করেছে। আরেকটা আছে ঈগল পরিবহন ফুলঝুড়ি। সেটাও আমাদের নয়।’
তিনি জানান, আসল ঈগল পরিবহনের মালিক দুই ভাই। তাদের নাম পবিত্র কাপুরিয়া ও অশোক রঞ্জন কাপুরিয়া। তাদের বাড়ি যশোর।