ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি রেস্টুরেন্টে খাসির মাংসের তরকারিতে তেলাপোকা পাওয়া গেছে বলে মালিককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
স্থানীয় সাংবাদিকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। তবে মালিক মো. সায়েমের অভিযোগ, পুরোনো অসন্তুষ্টি থেকে ওই সাংবাদিক তরকারিতে তেলাপোকা ছেড়ে দিয়েছেন।
অভিযোগকারী সাংবাদিক শফিউল্লাহ আনসারীর দাবি, জমির বিরোধসংক্রান্ত দ্বন্দ্বের কারণে রেস্টুরেন্ট মালিক তেলাপোকার বিষয়টি ঘোলাটে করেছেন।
ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকার সেভেন স্টার চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বুধবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা খাতুন অভিযান ও জরিমানার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিকেলে ওই রেস্টুরেন্ট থেকে এক ক্রেতা আমাদের জানান যে খাসির মাংসের তরকারি নিতে গিয়ে তাতে তেলাপোকা দেখেছেন। আমরা তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে এর সত্যতা পাই। পরে রেস্টুরেন্টের মালিককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
তেলাপোকা কীভাবে তরকারিতে গেল জানতে চাইলে রেস্টুরেন্টের মালিক মো. সায়েম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় সাংবাদিক শফিউল্লাহ আনসারী কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে খাবার খেতে আসেন। এ সময় ওয়েটার সাংবাদিককে ভাতের সঙ্গে খাসির গোশত দেয়।
‘তখন মাংসের মধ্যে তেলাপোকা পেয়ে ছবি তুলে ইউএনওকে ফোন দিয়ে জরিমানা করিয়েছেন সাংবাদিক ভাই। কিন্তু ওয়েটার বলেছে, সে খাবার দেয়ার সময় তেলাপোকা দেখতে পায়নি।’
সায়েম অভিযোগ করেন, ‘এর আগেও আমার রেস্টুরেন্টে কয়েকবার খাবার খেয়েছেন তিনি (শফিউল্লাহ)। খাবার খেয়ে মাঝেমধ্যে টাকা কম রাখতে বললেও কম রাখা হয়নি।
‘আমার ধারণা, এ জন্য আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তেলাপোকা নিজেও ছাড়তে পারেন। কারণ খাবারে তেলাপোকা পাওয়ার সময় অর্ধেক ভাত সাংবাদিক খেয়ে ফেলেছিলেন। আর তেলাপোকাটিও তাজা ছিল।’
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সাংবাদিক শফিউল্লাহকে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘রেস্টুরেন্টের মালিকের সঙ্গে রেস্টুরেন্টের পাশের একটি জায়গা নিয়ে আরেকজনের বিরোধ চলছে। রেস্টুরেন্টের মালিক ভেবেছিলেন আমি কোনোভাবে ওই ব্যক্তিকে সাপোর্ট দিচ্ছি। এ জন্য আমি তেলাপোকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা বলে ওঠে খাবারে তেলাপোকা ছিল না। তারা বোঝাতে চেয়েছিল আমি তেলাপোকা এনে ছেড়ে দিয়েছি।
‘আমি সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষকতা করি। যতবার এ রেস্টুরেন্টে খেয়েছি, ততবারই সব বিল ক্লিয়ার করেছি। শুধু জমিসংক্রান্ত ওই বিরোধের কারণে তেলাপোকা ছিল না- এমন মিথ্যা কথা বলে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছেন তিনি।’
তবে জমির বিরোধ নিয়ে শফিউল্লার সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই বলে দাবি করেছেন সায়েম।
তিনি বলেন, ‘আমি রেস্টুরেন্টটি একজনের কাছ থেকে ভাড়ায় চালাচ্ছি। এ রেস্টুরেন্টের পেছনে ওই মালিকের প্রায় দুই ফুট জায়গা আছে। আর এ জায়গাটি নিজের বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীর নামে আরেকজন হোটেল ব্যবসায়ী। এ জন্য তিনি ওই জায়গায় নিয়মিত হোটেলের ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখেন।
‘গত জুন মাসে ওই জায়গায় আমি সামান্য বালু ফেলেছিলাম। তখন জাহাঙ্গীর বাধা দিতে গেলে আমার রেস্টুরেন্ট ভবনের মালিকের ছেলের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়। মূলত এ নিয়ে ওই দুই পক্ষের বিরোধ।’
এই বিরোধে তিনি নেই জানিয়ে সায়েম বলেন, ‘সাংবাদিকের সঙ্গেও জমির কারণে আমার কোনো বিরোধ নেই। মূলত রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর টাকা কম না রাখার জন্যই খাবারে তেলাপোকা ফেলে ইউএনওর মাধ্যমে আমাকে জরিমানা করে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।’
অভিযানে গিয়ে তেলাপোকা তরকারিতে দেখেছেন কি না জানতে চেয়ে ইউএনও সালমাকে আবার কল করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অভিযানের সময় তেলাপোকা পাওয়াসহ দেখেছি দইয়ের কাপ ও মাংস একই ফ্রিজে রাখা। এ ছাড়া কিচেনেও সমস্যা রয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে জরিমানা করেছি।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে।’