ঢাকার সাভারে দশম শ্রেণির ছাত্রী নীলা রায়কে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় প্রধান আসামি মিজানুর রহমান চৌধুরীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলার বিচার শুরু হলো।
বুধবার ঢাকার ভারপ্রাপ্ত পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান আসামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন।
আসামিরা হলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী ও তার বন্ধু সাকিব হোসেন এবং সেলিম পাহলান। এর মধ্যে প্রধান আসামি মিজানুরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা সাকিব ও সেলিমও আদালতে হাজির ছিলেন।
২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নির্মল কুমার দাস আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর মামলাটি বদলি হয়ে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আসে। মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২/১০৯ ধারায় এই তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
এ ছাড়া মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন্নাহার সিদ্দিকাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়। অভিযোগপত্রে আটটি আলামতের কথা উল্লেখ করাসহ ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে নীলা ও তার ভাই অলক রায়ের পথরোধ করেন মিজানুর।
পরে তার ভাইয়ের কাছ থেকে নীলাকে ছিনিয়ে পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে নিয়ে নীলাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন মিজানুর। নীলা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
এ অবস্থায় মিজান নীলাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন নীলা মাটিতে পড়ে গোঙাচ্ছেন। আর মিজানুর ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে।
তখন লোকজন মিজানুরকে আটকানোর চেষ্টা করলে তিনি ছুরি উঁচিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
পরে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের আরিচাঘাট এলাকা থেকে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মানিকগঞ্জের চারীগ্রাম এলাকা থেকে একই দিন মিজানুরের বাবা ও মাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ওইদিন সাকিব ও জয়কে সাভারের রাজফুলবাড়ীয়া এলাকার একটি ইটভাটার পাশ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জয়কে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক রাজিব আহসানের কাছে জবানবন্দি দেন মিজানুর রহমান।
এরপর মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান, মা নাজমুন্নাহার সিদ্দীকা এবং অন্য দুই আসামি সাকিব ও সেলিম উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
মানিকগঞ্জ জেলার বালিরটেক এলাকার নারায়ণ রায়ের মেয়ে নীলা সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির অ্যাসেড স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। পৌর এলাকার কাজী মুকাম পাড়ার এক বাড়িতে তার পরিবার ভাড়া থাকত।
নীলা হত্যার ঘটনায় মিজান ও তার বাবা-মাকে আসামি করে সাভার থানায় হত্যা মামলা করেন নীলার বাবা নারায়ণ রায়। নারায়ণ রায় ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পে একজন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।