বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুলের মালা পরিয়ে কলেজে ফেরানো হলো অধ্যক্ষ স্বপনকে

  •    
  • ৩ আগস্ট, ২০২২ ১৮:৪০

অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘১৮ জুনের ঘটনা, কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারীর অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এটা আমি ভুলে যেতে চাই। দেশবাসী সবাইকে বলব, আমার জন্য দুঃখ-কষ্ট নেবেন না। আজকে আমি যে আনন্দ উপভোগ করছি, সবাই আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, আমি বিগত দিনের সবকিছু ভুলে যেতে চাই।’

নড়াইলে লাঞ্ছনার শিকার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কর্মস্থলে ফিরেছেন।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে ফুলের মালা দিয়ে কলেজে বরণ করে নেয়া হয়।নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএম কবিরুল হক মুক্তি, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তীসহ অন্যরা তাকে কর্মস্থলে নিয়ে যান। এ সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল, জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এবং এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৮ জুনের ঘটনা, কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারীর অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এটা আমি ভুলে যেতে চাই। দেশবাসী সবাইকে বলব, আমার জন্য দুঃখ-কষ্ট নেবেন না। আজকে আমি যে আনন্দ উপভোগ করছি, সবাই আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, আমি বিগত দিনের সবকিছু ভুলে যেতে চাই।

‘সবার জন্য কল্যাণ কামনা করি। আমি মনে করি, সমাজে যারা চক্রান্তকারী, দুর্বৃত্ত তাদের সংখ্যা অত্যন্ত কম। দেশে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি।’

নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বলেন, ‘ভালোবাসার একটা নজির স্থাপন, আমরা নতুন করে করলাম। আমি বিশ্বাস করি, ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ এই অঞ্চলের মানুষের একটা গর্বের জায়গা।

‘সেই গর্বের জায়গায় যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ছিলেন তার সঙ্গে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, আমরা সবাই অনুধাবন করেছি, এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা খুব অন্যায় করেছে। তাদের কাউকে আমরা ছাড় দিইনি।’

ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে এক হিন্দু শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন- এমন অভিযোগ তুলে কলেজে গত ১৮ জুন পুলিশের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্থ করা হয়।

গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন স্বপন কুমার। মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে এ নিয়ে দিনভর চলে উত্তেজনা।

এরপর পুলিশ পাহারায় স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।

শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।

অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর পর বন্ধ কলেজ গত ২৪ জুলাই খুলেছে। দীর্ঘ ১ মাস ৫ দিন পর কলেজ খোলা হয়। তবে শিক্ষক-কর্মচারীরা ওই দিন কলেজ খোলার ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতেন না।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়ের হোসেন চৌধুরী কলেজে গিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ডেকে নেন। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিত কলেজে আসতে অনুরোধ জানান।

কিছুদিন দ্বাদশ শ্রেণির শ্রেণিপাঠ কার্যক্রম চলানোর পর প্রথম বর্ষের ক্লাস চালু করা হয়। তবে অধিকাংশ শিক্ষকের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ রয়েছে। মোটরসাইকেল নিয়ে আসতেও ভয় পাচ্ছেন শিক্ষকরা।

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘গত ১৩ জুলাই বিকেলে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০ জুলাই কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ সে সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। পরে রোববার (২৪ জুলাই) কলেজ খোলা হয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার পর আমরা অধ্যক্ষকে কলেজে ফেরাতে পেরেছি।’

কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় ২৭ জুন নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।

দণ্ডবিধির ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘এলাকায় এবং কলেজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের বাড়িতেও সার্বক্ষণিক মোতায়েন আছে পুলিশ। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপরাধীদের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। যাচাই-বাছাই করেই আসামি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর