একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য সাড়ে তিন বছর পর এসে প্রকাশ্যে জোট নেতা ড. কামাল হোসেনকে দায়ী করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামতে বিএনপির বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপের মধ্যে ড. কামালকে উপেক্ষার মধ্যে এমন বক্তব্য এলো।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সরকার ইভিএম-এ নির্বাচন করতে চায় কেন?’ বিষয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মোশাররফ। সভাটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম।
আলোচনায় মোশাররফ অন্যান্য নানা বিষয়ের সঙ্গে কথা বলেন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি নিয়ে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দল গিয়ে ড. কামাল হোসেনকে ইমাম বানিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে, তিনি বললেন নির্বাচনই করবেন না। এই ফ্রন্টে আমরা এত কষ্ট করে যে রূপরেখা বানালাম, ড. কামাল হোসেনের নির্বাচন না করার কারণে ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা সেদিন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ফলে বিএনপির মতো একটি দলকে এই ফ্যাসিবাদী সরকার পাঁচ বা ছয়টি আসন দিয়ে বিদায় করে দেয়।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তার জোট ২০ দলের পাশাপাশি গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে নিয়ে গঠন করে আলাদা জোট। ব্যক্তি হিসেবে যোগ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন।
আরও পড়ুন: ড. কামালকে ডাকছে না বিএনপি
ছোট দল হলেও বিস্ময়করভাবে বিএনপি জোটের প্রধান নেতা হিসেবে সামনে নিয়ে আসে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনকে, যিনি কোনো নির্বাচনের ভোটে কখনও জিততে পারেননি।
সেই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট মোট ছয়টি আসনে জেতে। পরে স্থগিত একটি আসনে জয় পাওয়ার পর আসনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭টি।
নির্বাচনের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ড. কামাল হোসেনের প্রতি নানাভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই চুপ ছিলেন।
মোশাররফ কথা বলেন বিএনপির চলমান সংলাপ নিয়েও। বলেন, ‘সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। তাদের মতামত নিয়ে এটা সমৃদ্ধ করতে চাই। সে জন্য এখনও সেই রূপরেখা জনগণের সামনে আসেনি।
‘আজও আমাদের মহাসচিব একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এই আলোচনা শেষে অবশ্যই দেশে একটা মঞ্চ করতে পারব; যুগপৎ আন্দোলন করতে পারব কি না, এর একটা সিদ্ধান্ত হবে।’
আন্দোলনের জন্য জনগণ মুখিয়ে আছে বলেও মনে করেন বিএনপির এই নেতা। বলেন, ‘এখন শুধু রাস্তায় মানুষের ঢল নামা বাকি। আমরা রাস্তায় সংকটের সমাধান করব ইনশাআল্লাহ। সেই ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।
‘ইয়াহিয়া খানের মতো শাসক টিকতে পারেনি। সুতরাং কারফিউ বা অন্য কোনোভাবেই ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবেন না। রাস্তায় নামলে তদের পতন হবেই হবে।
‘শ্রীলঙ্কায় দুই ভাই ১৮ বছর শাসন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। অতএব রাস্তায় নামার বিকল্প নেই। মানুষ দুরবস্থার মধ্যে আছে। তারা একটা পরিবর্তন চায়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’
হারিকেন ধরিয়ে দেবেন, টাকাই তো নেইলোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভে হারিকেনের ব্যবহার দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দলটির শাসনামলে দেশে বিদ্যুতের করুণ চিত্র তুলে ধরে বলেছিলেন, বিএনপি নেতাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিতে হবে। সেই বক্তব্যেরও জবাব দেন মোশাররফ।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি নাকি লোডশেডিং জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজকে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখন তিনি বিএনপিকে হারিকেন দেয়ার কথা বলছেন। আরে সেটা করতেও তো ৪-৫ কোটি হারিকেন কিনতে হবে। সেই টাকাও তো তাদের নেই। আজকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ।’
সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। তারা মেগা উন্নয়নের নামে মেগা লুট করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে।
‘তারা বিদ্যুৎ খাতের জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা লুট করছে। তারা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠজন।
‘দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধান না করে বিদেশ থেকে তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এভাবে দেশকে আমদানিনির্ভর করে দেশের রিজার্ভ শূন্য করেছে। এখন তারা রিজার্ভের হিসাব নিয়েও মিথ্যাচার করছে। আইএমএফের সঙ্গে তাদের হিসাব মিলছে না। সরকার এখন আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না।’
বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘এটা তো বেশি দিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সময় আসছে বাংলাদেশে সেই অবস্থা দেখবেন।’
ইভিএম চলবে নাএই যন্ত্র ব্যবহার করে ভোটে কারচুপি করা যায় বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। বলেন, আমরাসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়নি। তবে সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপরীতে মত দিয়েছে। আমরা তো চাইই না। সুতরাং এটা তো এখানেই মীমাংসিত হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘যে দেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে পারে না, তারা কীভাবে মেশিনে ভোট দেবে? এই ব্যবস্থা তো বিশ্বে বাতিল করা হয়েছে। কারণ, এটা মানুষের তৈরি। সেখানে পেপার ট্রেইল নাই। সুতরাং এটা দুরভিসন্ধিমূলক। এটা ভোট ডাকাতির মেশিন।’