জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তা চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন ছিনতাইকারী দুই যুবক। এই ঘটনায় দুই ছিনতাইকারী ও চোরাই ফোনের ক্রেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে পারিশার ফোনটি।
গ্রেপ্তার দুই ছিনতাইকারী হলেন রাশেদুল ইসলাম ও রিপন ওরফে আকাশ। আর গ্রেপ্তার মোবাইল ক্রেতা হলেন মো. শফিক।
বুধবার দুপুরে তেঁজগাও থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবাইয়াত জামান।
তিনি বলেন, ‘পারিসার ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলার পর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা প্রাথমিকভাবে ছিনতাইকারী দুইজনকে শনাক্ত করি। এদের মধ্যে রাশেদকে গ্রেপ্তারের পর সে তার অপর সহযোগীর বিষয়ে তথ্য ও ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়।
‘রাশেদের সহযোগী রিপন অন্য একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় অপর এক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। পরবর্তীতে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানায় যে তেজগাঁও এলাকার একজন মোবাইল ব্যবসায়ী শফিকের কাছে পারিশার মোবাইল ফোনটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই টাকার ২ হাজার টাকা নিজেরা ভাগ করে নিয়ে বাকি দুই হাজার টাকায় একটি বারে মদ্যপান করেন রাশেদ ও রিপন। পরবর্তীতে শফিকের কাছ থেকে পারিশার মোবাইলটি উদ্ধার করে চোরাই ফোন কেনার অভিযোগে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।’
পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পারিশার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া দুই যুবক পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের মধ্যে রিপন ঘটনার কিছুদিন আগে একটি ছিনতাই মামলায় জামিন পেয়ে আবারও একই কাজে জড়িত হন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৬টি মামলা চলমান।
এদিকে ভুক্তভোগী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তার তার ফোন ফেরত পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও অপরাধী দুই যুবকের শাস্তি দাবি করেন।
তিনি বলেন, আমি চাই তাদের যেন কোনোভাবেই জামিন না হয়। কারণ জামিন পেলে তারা আবারও একই কাজ করবে।’
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পারিশা বলেন, ‘গত ২১ জুলাই কারওয়ান বাজার এলাকায় বাসে বসেছিলাম। হঠাৎ কেউ একজন আমার ফোনটি জানালা দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। আমি বাস থেকে নেমে তার পিছু নিয়েও আর ধরতে পারিনি। এর কিছুক্ষণ পর দেখি রাস্তায় আরেকজন ছিনতাইকারীকে অন্যরা ধাওয়া করছিল। তাৎক্ষণিকভাবে আমার মাথায় আসে যে আমার ফোনও যেহেতু একটু আগে এখান থেকেই ছিনতাই হয়েছে, তাই এই ছিনতাইকারীকে ধরলে আমার ফোনের ছিনতাইকারীর খোঁজ পাওয়া যেতে পারে। তখন আমি আর কিছু চিন্তা না করে ওই ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলি। এরপর পুলিশ আমার ফোনের ছিনতাইকারীদের খুঁজে বের করে।
পারিশার মোবাইল ফোন উদ্ধার হলেও অসংখ্য ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করেও কেন তাদের হারানো জিনিস ফিরে পান না সংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এডিসি রুবাইয়াত জামান বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই ভুক্তভোগীরা থানায় শুধু জিডি করেন, এসব বিষয়ে তাদের মামলা করার আগ্রহ কম থাকে। পারিশাও প্রথমে শুধু জিডি করতে চেয়েছিলেন, পরবর্তীতে আমরা তাকে বুঝিয়ে বলি যে মামলা করলে আমাদের জন্য তদন্ত করা সহজ হয় এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা যায়। পরে পারিশা মামলা করায় আমরা বিষদ তদন্ত করে ছিনতাইকারীদের ধরতে সক্ষম হয়েছি।’
একইভাবে অন্য ভুক্তভোগীরাও মামলা করলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ জন্য যেকোনো ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনায় শুধু জিডি না করে মামলা করার জন্য সাধারণদের প্রতি অনুরোধ জানান পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।