কুষ্টিয়ায় একের পর এক মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। এবার রক্সি পেইন্টের এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ভেড়ামারা পুলিশ।
ভেড়ামারা পাইলট স্কুলের পাশ থেকে বুধবার সকাল ১০টার দিকে চটের বস্তায় মোড়ানো অবস্থায় লোকমান হোসেনের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় পরের দিন মঙ্গলবার তার স্ত্রী জিন্নাত আরা টুম্পা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
নিহত ৩৬ বছর বয়সী লোকমান হোসেনের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায়।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান।
এ নিয়ে গত ১৬ দিনে জেলায় ৬টি মরদেহ উদ্ধারের তথ্য মিলেছে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের সঙ্গে কথা বলে।
জিডির বরাতে ওসি বলেন, ‘কোম্পানির টাকা তুলতে সোমবার ভেড়ামারা গিয়েছিলেন লোকমান হোসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ‘মরদেহ চটের বস্তায় পুরোপুরি মোড়ানো ছিল। ভেতরে আরেক ধাপে সাদা পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। মাথাসহ সারা শরীর রক্তাক্ত, আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে মামলা নেয়া হবে।’
এদিকে বুধবার সকাল ৯টার দিকে কুমারখালী বাজার থেকে অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই বা হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার।
পরিচয় শনাক্ত ও মৃত্যুর কারণ জানতে কাজ করছে পুলিশ।
এর আগে গত সোমবার কুমারখালীর সদকী চরপাড়ায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি সেলিম আলীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে।
গত ২১ জুলাই কুষ্টিয়া শহরের চর মিলপাড়ায় লিয়াকত আলী মণ্ডল নামের এক হোটেল ব্যবসায়ীকে ইটের আঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিনই মিরপুর উপজেলার কালীতলা ব্রিজের নিচ থেকে নজরুল ইসলাম নামের এক কৃষকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এরও আগে ১৭ জুলাই কুমারখালীর নন্দলালপুরে নয়ন নামের এক ইটভাটা শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এর মধ্যে কালীতলা ব্রিজের নিচ থেকে নজরুলের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
মিরপুর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে হত্যা কি না। আলামত পেলে এটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে। অন্য সব ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করেছেন পরিবারের সদস্যরা।’
জুলাই মাসের ৭ তারিখে কুষ্টিয়ার গড়াই নদী থেকে নিখোঁজ সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের পলিথিনে মোড়ানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও এখনও প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার বা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছেন জেলার সাংবাদিকরা।
একের পর এক মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ‘হত্যার ঘটনাগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো কোনো ঘটনায় সেদিনই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।
‘এসব ঘটনার বেশির ভাগই জমিজমা বা টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধ। এ ব্যাপারে পুলিশের কাজ করার এখতিয়ার নেই। আদালতে পাঠানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হত্যার পর ঘটনা দেওয়ানি থেকে ফৌজদারি অপরাধে পরিণত হয়, তখন পুলিশ কাজ করে। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জেলার ঝাউদিয়ায় মানুষকে সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধ থেকে বের করে আনতে বিট পুলিশের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে। সব থানা এলাকায়ই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’