নরসিংদীতে নালা থেকে উদ্ধার এক নবজাতককে নিজের সন্তান বলে দাবি করেছেন এক নারী। সদর হাসপাতালে সন্তান দাবি করা শিশুটিকে বুঝে পেতে অপেক্ষায় আছে তিনি।
৪৫ বছর বয়সী সালমা বেগম মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তার গর্ভধারিণী মা, স্বামীর কথায় প্রসবের পর তাকে ড্রেনে ফেলে দেই। তবে মনকে মানাতে আর পারি নাই, তাই হাসপাতালে এসে কোলে তুলে নেই।’
রোববার রাতে নরসিংদীর দাসপাড়া এলাকার একটি নালা থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ। শিশুটিকে সমাজসেবার অধীনে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার রাতে নালা থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া নবজাতককে আমরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করি। এরপর বিষয়টি লিখিতভাবে নরসিংদী সমাজসেবা অধিদপ্তরকে জানানো হয়। শিশুটি এখনও হাসপাতালে আছে।’
সালমা জানান, নিম্ন আয়ে রাজমিস্ত্রিদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন তার স্বামী। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্বামীর বাড়ি ছিল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায়। ১০ বছর আগে স্বামী মারা যান। এরপর প্রথম সংসারে এক ছেলে দুই মেয়ে রেখে সাত বছর পর দিনমজুর রহম আলীর ঘরে দ্বিতীয় সংসার বাঁধেন তিনি।
তার অভিযোগ, তবে গর্ভধারণের পর থেকে স্বামী রহম আলী বাচ্চাটি নষ্ট করার জন্য বলেন। ১০ মাস পর নরসিংদী শহরের দাসপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া করা বাড়িতে প্রসব হয় মেয়েশিশু। পরে স্বামীর কথায় শিশুটিকে নালায় ফেলে দেন বলে অভিযোগ করেন সালমা বেগম।
সালমা বলেন, ‘প্রায় তিন বছর পর জন্ম নেয় আমার মেয়েশিশু। বড় অপরাধ করে ফেলেছি, ওই দিন পুলিশের ভয়ে কাছে নেই। বড় স্যারেরা কইছে, ডিএনএ মিলে গেলে আমার শিশুটিকে দিয়ে দিবে। আমি গরিব মানুষ, আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। বাবা মারা যাওয়ার পর মা মনঞ্জুরা বেগমকে নিয়ে আসছি।’
সালমার স্বামী দিনমজুর রহম আলীর প্রথম স্ত্রী বিদেশে থাকেন। তার প্রথম সংসারে তিন ছেলে রয়েছে বলে জানান সালমা বেগম।
এ বিষয়ে তার স্বামী রহম আলীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
রাতে শিশুটির খোঁজ নিতে হাসপাতালে আসেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন মো. নুরুল ইসলাম।
এ সময় নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নবজাতককে ভর্তির পর থেকে বিশেষ সেবা দেয়া হচ্ছে। আমি নিজেও নজর রাখছি। শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো আছে।’
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘শিশুটির মা হিসেবে দাবি করছেন সালমা নামের ওই নারী। তবে শিশুটি পরিত্যক্ত হিসেবে ভর্তি হওয়ায় সরাসরি দাবি করা মায়ের হাতে শিশুটিকে তুলে দিতে পারি না। শিশুর পরিবারের বিষয়টা সমাজসেবা অধিদপ্তর দেখবে। আমাদের চিকিসৎকরা সার্বক্ষণিক শিশুটির চিকিৎসাসেবা ও সার্বিক তদারকি করছেন।’
নরসিংদী সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান তাপস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নালা থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটির মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মা দাবি করা ওই নারীর প্রমাণ পেলে আমরা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেব শিশুটি। প্রমাণ না মিললে, শিশুটিকে আমরা আজিমপুরে ছোটমণি নিবাসে পাঠিয়ে দেব।’