নীলফামারীর সৈয়দপুরের সরকারি খাদ্যগুদামের শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পণ্য খালাস। মজুরি বাড়ানোর দাবি তুলে ৫ দিন ধরে এই কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, পণ্য নিয়ে ৫টি ট্রাক গুদামের বাইরে অপেক্ষায় আছে। ট্রাকচালক ও শ্রমিকরা বাইরে বসে আছেন।
এই গুদামে ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন জানিয়ে শ্রমিক আকছাদ আলী বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর উপায় নেই। বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
‘ঝড়-বৃষ্টি-রোদ উপেক্ষা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শ্রম দিচ্ছি অথচ আমরা নায্য মজুরি পাচ্ছি না।’
জাতীয় শ্রমিক লীগ সরকারি খাদ্যগুদাম শাখার সহসভাপতি আনোয়ার হাসেন বলেন, ‘আমরা সংসার চালাতে পারছি না। আমাদের দুঃখ কেউ শুনছেন না। এখানকার ৪১ জন শ্রমিক চরম সংকটে পড়েছেন।
‘এখানে কাজ করে সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পাই। এটা দিয়ে কী সংসার চলে? নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সে হিসাবে আমাদের শ্রমের মূল্য বাড়েনি।’
আব্দুল হামিদ নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমি স্বাধীনের (দেশ স্বাধীনের) পর ঢুকেছি এই গুদামে। তখন ১০ পয়সা ছিল টন প্রতি শ্রমিকের পাওনা। এখন ৩৭ দশমিক ৫০ টাকা দিয়েও সংসার চালান যাচ্ছে না।
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুতি জানাই যেন আমাদের দিকে অসহায় এই শ্রমিকদের দিকে নজর দেন। সমস্যা সমাধান করে দেন।’
শ্রমিকদের অভিযোগ, ৩৭ দশমিক ৫০ টাকা টন হারে মজুরি দেয়া হয়। এই টাকা থেকে শতকরা ২৫ ভাগ ভ্যাট এবং শতকরা ৩ ভাগ অফিস খরচ কেটে নেয়া হয়। হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার না থাকায় দেড় বছর থেকে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছেন। এ কারণে মজুরি ৩ থেকে ৪ মাস পর পেয়ে থাকেন তারা।
খাদ্যগুদাম শ্রমিক লীগের সভাপতি জিকরুল হক বলেন, ‘বর্তমান টনের বিপরীতে সাড়ে ৩৭ টাকা ২০১৪ সালের আগে নির্ধারণ করা। ২০১৪ সালের পর নতুন করে দরপত্র বা মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। এর ফলে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।
‘২ বছর পরপর হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার নিয়োগ হয়ে থাকে। ঠিকাদারের মাধ্যমে আমাদের টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু দরপত্র হলে ৩-৪ মেয়াদে দুই টাকা করে বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়ত।’
তিনি জানান, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে এর আগেও আন্দোলন করেছেন। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আশ্বাস আর পূরণ হয়নি বলে এ কারণে এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন না।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীমা নাসরিন শিমু বলেন, ‘হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার না থাকায় দেড় বছর থেকে মাস্টাররোলে অফিস থেকে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। গেল কয়েক দিন থেকে তাদের আন্দোলনে গুদামের কার্যক্রম বন্ধ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন স্যারেরা দেখছেন, আলোচনাও করছেন। হয়তো সমাধান হয়ে যাবে।’
মজুরির বিষয়টিতে হাত নেই জানিয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘এটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। সামনে দরপত্র হবে, স্বাভাবিকভাবে দরও বাড়তে পারে। সারা দেশে একরেটে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এখানে ব্যত্যয় ঘটাচ্ছেন শ্রমিকরাই।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে শ্রমিকরা কাজ করছেন সেখানে। তাদের দাবিও যৌক্তিক। মজুরি বাড়ানোর দরকার, তবে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করাটাও অযৌক্তিক। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে আশা করছি।’
এই আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনও।