নোয়াখালীর কবিরহাটে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে করা মামলায় প্রধান আসামিসহ দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী গ্রাম থেকে মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এদিন দুপুরে পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজির মামলা করেন ওই নারী। এর পরপরই অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
গ্রেপ্তাররা হলেন, কোম্পানীগঞ্জের আবু বক্কর ছিদ্দিক তানভির ও ইকবাল হোসেন।
ওসি জানান, উপজেলার বসুরহাট হাসপাতাল সড়কে একটি সেমিপাকা বাড়িতে ওই নারী তার দ্বিতীয় স্বামী মো. কামাল ও আগের ঘরের চার সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, গেল সোমবার রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ওই নারী। আসামি আবু বক্করের নেতৃত্বে মো. রাজন, মো. আলতাফ, মো. ইকবাল, রুহুল আমিন, মো. ফারুকসহ অন্যরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেন।
আসামি আলতাফ ওই নারীকে বিবস্ত্র করেন এবং রাজন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। অন্য আসামিরা কামালকে বেধড়ক মারধর করে দুটি মোবাইল ও ৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, এ সময় কামালের সঙ্গে ওই নারীর বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক আছে অভিযোগ তুলে তারা দুই লাখ চাঁদা দাবি করেন। কামাল দিতে না পারায় তাকে চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এ সময় ওই নারী ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
পরদিন বাছুরসহ একটি গাভি নিয়ে যান অভিযুক্তরা। বিয়ের কাবিন দেখানোর পর চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কামালকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ সময় কাউকে কিছু জানালে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেন আসামিরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনার আমি কিছু জানি না। আমার পরিষদে কাউকে আটকে রাখা হয়নি।’
ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে চরএলাহী গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে কবিরহাট থানা পুলিশ। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১০-১২ জনকে।
তিনি আরও জানান, চরএলাহী ইউনিয়ন পরিষদে গৃহবধূর স্বামীকে আটকে রেখে চাঁদা আদায় এবং দাবির বিষয়টি তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। গ্রেপ্তার আসামিদের বুধবার সকালে নোয়াখালী মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হবে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে ঘরে ঢুকে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা হয়। সে ভিডিও ৪ অক্টোবর ফেসবুকে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে আলোড়ন হয়। এ ঘটনায় আন্দোলনের মুখে সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করে।
বেগমগঞ্জের ওই নারী সে সময় তিনটি মামলা করেন। একটি নির্যাতনের মামলা, অন্যটি পর্নোগ্রাফি আইনে করা। পরে ধর্ষণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়। ধর্ষণের মামলায় একই আদালত গত ৪ অক্টোবর দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। নির্যাতনের মামলায় ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।