‘উচ্চ আদালত সম্পর্কে মানুষের যেন ন্যূনতম সন্দেহ না থাকে হলফনামা দিয়ে সেটি পরিস্কার করুন। আইনজীবী হিসেবে কত ফি নিয়েছেন, সেটা নিয়ে লুকোচুরি করার কী আছে। স্পষ্ট করে হলফনামা দিয়ে বলুন, কত ফি নিয়েছেন। আর এর সঙ্গে আদালতের কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা সেটাও পরিস্কার করুন।’
নোবেল বিজয়ী ডক্টর মো. ইউনুসের গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে রিটকারীদের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার অভিযোগ উঠায় আইনজীবী ইউসুফ আলীকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেয়।
পরে আদালত আইনজীবী ইউসুফকে হলফনামা দিতে আরও দুই দিন সময় দেন।
এ সময় আদালতে ইউসুফের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম, সাঈদ আহমেদ রাজা, রবিউল আলম বুদু, অনীক আর হক।
পরে আইনজীবী আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কতটাকা ফি নেয়া হয়েছে তা হলফনামা আকারে জমা দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, শ্রমিকরা যে টাকা পেয়েছেন তার মধ্যে ৬ শতাংশ টাকা লিগ্যাল ফি এবং অন্যান্য ফি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৬ শতাংশ ফি হিসেবে ২৬ কোটি টাকা হয়। তার মধ্যে আইনজীবীর ফি ১৬ কোটি এবং ১০ কোটি অন্যান্য ফি।আদালত অন্যান্য ফি ১০ কোটি টাকা কেন সেটি স্পষ্ট করে হলফনামা দিতে বলেছেন আদালত।’
গত ২৩ মে আদালতের বাইরে উভয়পক্ষের সমঝোতা হয়েছে উল্লেখ করে রিটকারিদের আইনজীবী ইউসুফ আলী জানান, সম্প্রতি গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা দাবি নিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়েছে। মালিকপক্ষ গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছেন, আইন অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করা হবে। এ কারণে আবেদনকারীরা বলেছেন, তারা মামলাটি আর চালাতে চান না, তাই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
পরে ৩০ জুন এ আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, গ্রামীণ টেলিকম মোট ৪৩৭ কোটি টাকার একটি সেটেলম্যান্ট একাউন্ট করেছিল। যার সিগনেটরি হলেন কোম্পানির এমডি এবং ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। ওই অ্যাকাউন্টে পুরো ৪৩৭ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয়। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে পাওনাদার ব্যক্তিকে তাদের পাওয়া হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে।
পরে আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেয়।
এরপরই সংবাদ প্রকাশ হয় আইনজীবী ইউসুফ আলী ১২ কোটি টাকা নিয়ে সমঝোতায় মামলা নিষ্পত্তি। এরপরই আইনজীবী ইউসুফ আলীর ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়। তখন আদালত বিষয়টি নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা আড়াইশ কোটি টাকার বেশি। এই পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়েছে। এরপর সেই নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ জন কর্মী। এই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেয় আদালত।
এরমধ্যেই সমঝোতায় মামলাটি হাইকোর্ট নিষ্পত্তি করে দেয়।