বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার দুই কারণ

  •    
  • ২ আগস্ট, ২০২২ ১০:০৫

এক কোটি বাংলাদেশি দেশের বাইরে থাকেন। এদের মধ্যে সাত থেকে আট লাখ নারী। অর্থাৎ পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ৯২ থেকে ৯৩ লাখ, যারা আসলে এই শুমারিতে হিসাবে আসেননি। আবার নারীর গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় তিন থেকে চার শতাংশ বেশি। এই দুই কারণে সংখ্যায় পুরুষকে নারীরা ছাড়িয়ে গেছে বলে উঠে এসেছে অভিবাসন ও জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা দুজনের বিশ্লেষণে।

নতুন জনশুমারিতে বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার পর তুমুল আলোচনা। কীভাবে এটা ঘটল- তা নিয়ে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হাজির হচ্ছে।

‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন।

অর্থাৎ নারীর সংখ্যা বেশি ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮২ জন।

২০১১ সালের আদমশুমারির হিসাবে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। সে সময় পুরুষের সংখ্যা বেশি ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৫ জন।

ওই বছর প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ ছিল ১০০ দশমিক ৩০ জন।

এর আগের ২০০১ সালের আমদশুমারিতে পুরুষের সংখ্যা ছিল আরও বেশি। ওই বছর দেশে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ পাওয়া যায় ১০৬ দশমিক ৪০ জন।

অর্থাৎ কেবল গত ১০ বছরেই নয়, এর আগে থেকেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে।

কিন্তু এই পরিসংখ্যানে এই সিদ্ধান্তে আসা কি সম্ভব যে দেশে ছেলের তুলনায় মেয়ে শিশুর জন্ম বেশি হচ্ছে?

জনসংখ্যা ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন দুজন ব্যক্তির মত নিলে জবাব আসে ‘না’।

জনশুমারিতে একটি নির্দিষ্ট দিনে দেশে অবস্থানের হিসাব করা হয়েছে। কিন্তু দেশের বাইরেও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি থাকে, যাদের হিসাব এই শুমারিতে আসেনি।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান নিউজবাংলাকে জানান, তাদের হিসাবে এক কোটি বাংলাদেশি দেশের বাইরে থাকেন। এদের মধ্যে সাত থেকে আট লাখ নারী। অর্থাৎ পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ৯২ থেকে ৯৩ লাখ, যারা আসলে এই শুমারিতে হিসাবে আসেননি।

এই এক কোটির সবাই আবার বৈধ কর্মী। এর বাইরে আরও লাখো প্রবাসী আছেন, যারা অবৈধ পথে দেশ ছেড়েছেন। নিঃসন্দেহে এদের মধ্যে নারী-পুরুষের অনুপাত বৈধ পথে যাওয়াদের অনুপাতের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ছেড়ে প্রবাসে কাজ করতে যাওয়ার প্রবণতা নিঃসন্দেহে গত দুই দশকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এখন বছরে ছয় থেকে সাত লাখ মানুষ দেশের বাইরে কাজ করতে বা পড়াশোনা করতে যায়।

এর বাইরে আরও একটি বিষয়কে সামনে আনতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম। নারীদের আয়ুষ্কাল বেশি হওয়াকেও একটি কারণ হিসাবে দেখাতে চান তিনি।

তিনি বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৪.২ বছর। আর পুরুষদের ৭১.১ বছর। আবার জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এর বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২১ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৫ বছর, যেখানে পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর। অর্থাৎ বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় ৩-৪ বছর বেশি।’

তবে অভিবাসন ও নারীর আয়ু বেশি হওয়া ছাড়া অন্য কোনো কারণ আছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবের জন্য জনশুমারির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পাশাপাশি আলাদা গবেষণার প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।

নারী বেশি গ্রামে

অভিবাসন যে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে একটি নিয়ামক, সেটি উঠে আসে বিবিএসের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনেও। এতে দেখা যায়, শহরে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও গ্রামে বেশি নারীর সংখ্যা।

অর্থাৎ গোটা দেশের মতোই কাজের খোঁজে গ্রাম থেকে পুরুষরা শহরমুখী বেশি হয়েছেন।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যার ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন গ্রামাঞ্চলে বাস করেন। বিপরীতে শহর এলাকায় রয়েছেন ৫ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন।

গ্রামে পুরুষের সংখ্যা ৫ কোটি ৫১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪২ জন, আর নারী ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯০ হাজার ৪৬২ জন।

অর্থাৎ গ্রামে নারীর সংখ্যা বেশি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৬২০ জন।

অন্যদিকে শহর এলাকার মোট জনসংখ্যার ২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮২ জন পুরুষ আর নারী ২ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৪ জন।

অর্থাৎ শহর এলাকায় পুরুষের সংখ্যা বেশি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ২৩৮ জন বেশি।

অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামে নারী বেশি হওয়াটার কারণ অভ্যন্তরীণ অভিবাসন। কাজের জন্য পুরুষ শহরমুখী হয়েছে বেশি।’

নারীর মধ্যে সাক্ষরতা কম

দেশে নারী-পুরুষ মিলে ৭ বছর বা এর ওপরে মোট সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ। যার মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১.৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১.২৮ শতাংশ।

এই ক্ষেত্রে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা কিছুটা বেশি।

নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬.৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২.৮২ শতাংশ।

নারীদের বিয়ের হার, বিধবা বেশি

বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যার ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ অবিবাহিত। নারীর ক্ষেত্রে এ হার ২১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

অবিবাহিত নারী সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে ৩০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এরপরে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান ২৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এরপর ময়মনসিংহ ২২ দশমিক ০৪ শতাংশ।

আর মোট জনসংখ্যার ৬৭ দশমিক ৪১ শতাংশ নারী বিবাহিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগে ৭০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এরপর রাজশাহী ৭০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এবং বরিশালে ৬৯ দশমিক ০৬ শতাংশ।

নারীদের মধ্যে বিধবা ও বিপত্নীকের অনুপাত পুরুষদের তুলনায় ১০ গুণ। মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী বিধবা বা বিপত্নীক, অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের প্রায় একজন নারীই একাকী।

পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ১ শতাংশেরও নিচে, ০.৯৬ শতাংশ।

বিধবা নারী সবচেয়ে বেশি রংপুরে, ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘নারীদের মধ্যে বিধবার সংখ্যা বেশি তাদের আয়ুর কারণে। তাদের গড় আয়ু পুরুষের তুলনায় বেশি বলেই এমনটা হচ্ছে।’

মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার কম

নারীদের মধ্যে সাক্ষরতার মতোই মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতাও কম।

দেশে ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সসীমায় মোবাইল ব্যবহারকারীর হার ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষের মোবাইল ফোন রয়েছে।

মোবাইল ব্যবহারে লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারী।

১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ পুরুষের ও ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ নারীর মোবাইল ফোন রয়েছে।

২০২২ সালের গত তিন মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে মোট ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এবং ১৮ বছর থেকে বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ জনসংখ্যা ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রেও নারীরা পিছিয়ে।

৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে ৩৮ দশমিক ০২ শতাংশ পুরুষ ও ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ২৮ দশমিক ০৯ শতাংশ নারী গত তিন মাসে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর