ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ যে মামলা করেছে তাতে বিএনপিরই অজ্ঞাতপরিচয় শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপি অভিযোগ করছে, পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন আব্দুর রহিম মাতাব্বরের। তবে মামলার এহাজারে বলা হয়েছে, নিজ দলের নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেলের আঘাতে ওই কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
রোববার সংঘর্ষে রহিমের মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার বিএনপির দেশজুড়ে প্রতিবাদের মধ্যে এই মামলা হয় বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ সরদার।
তিনি বলেন, ‘হত্যা ছাড়াও পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে আরও একটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুইশ জনকে আসামি করেছে পুলিশ।’
এই ঘটনায় সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের এই মামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভোলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ ট্রুম্যান। তিনি বলেন, ‘হামলা করল পুলিশ, আর মামলা করে আমাদের বিরুদ্ধে!... আমরাও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার দেশজুড়ে যে লোডশেডিং করছে, তার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে রোববার ভোলায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষের সময় উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আব্দুর রহিমের মৃত্যু হয়।
ভোলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী শহরের কালিনাথ রায়ের বাজারে পুলিশ ফাঁড়ি পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। একই সঙ্গে পুলিশের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়।
‘তখন পুলিশ আত্মরক্ষার জন্য শহরের একটি ক্লিনিকের গলিতে ঢুকলে বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার শর্টগানের গুলিতে আব্দুর রহমানের মৃত্যু হতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
তবে পুলিশের এই দাবি নাকচ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা সারা দেশের ন্যায় ভোলাতেও অব্যাহত লোডশেডিং ও জ্বালানি অবস্থাপনা নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করি। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রহিম প্রাণ হারান।’
ভোলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নিরুপম সরকার সোহাগ বলেন, ‘হাসপাতালে রহিমকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার শরীরে ইট ও গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে বিস্তারিত জানানো হবে।’
আতঙ্কে বিএনপির নেতারা
সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে ভোলা জেলা বিএনপির কার্যালয়। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন দলের নেতা-কর্মীরা। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশ এলাকায়।জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ‘কালকের ঘটনার পর পুলিশ পুরো জেলায় নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। এতে তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের নির্যাতনে আমরা এক ভাইকে হারিয়েছি। আমাদের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আগামীতে কর্মীরা আরও শক্তিশালী হয়ে কর্মসূচি পালন করবে।’
ছাত্রদল নূরের অবস্থা আশঙ্কাজনক
পুলিশের হামলায় বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি নেতাদের। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ ট্রুম্যান জানান, গুরুতর আহতদের মধ্যে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে ২২ জন ভর্তি রয়েছে। ঢাকার একটি হাসপাতালে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম আছেন লাইফ সাপোর্টে। তার মুখে ছররা গুলি লেগেছে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ‘রহিমের মৃত্যুর ঘটনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গায়েবানা জানাজার কথা থাকলেও ভোলায় তা হয়নি। নিহতের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের পর জানাজার আয়োজন করেছে বিএনপি।’
এক দিন পর মরদেহ হস্তান্তর
রোববার নিহত আব্দুর রহমানের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন দুপুরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
সোমবার বিকেলে দ্বিতীয় জানাজা শেষে ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন নিহত রহিমের পরিবারের খোঁজ খবর নেন এবং সমবেদনা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।