নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনর দাবি করেছে। এর মধ্যে একটি দল সব ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি জানায়। সে দলের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ক্যান্টনমেন্ট খালি করে ফেললেও সব কেন্দ্রে সেনা দেয়া সম্ভব হবে না।
ইসি কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘সংলাপে একটা রাজনৈতিক দলের একজন প্রস্তাব দিলেন, সব কেন্দ্রে সেনাবাহিনী দেয়ার জন্য। তখন আমি ওনাকে একটা পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি কি জানেন ৪০ হাজার কেন্দ্র আছে। তো ৪০ হাজার কেন্দ্রে যদি আমরা সেনা দিতে চাই, কত আর্মি দরকার? আমাদের তো এত অফিসার এবং আর্মি নাই। তখন আমরা কী করব? তখন ক্যান্টনমেন্ট খালি করে দিলেও, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী দিলেও হবে না।’
রাজধানীর আগারগাওঁয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপের বিষয় নিয়ে জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন ইসি কমিশনার।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে মতবিনিমিয় সভা শেষে কৌশলপত্র প্রস্তুতে মনোনিবেশ করার কথা জানিয়েছে ইসি।
সে জন্য দলগুলো থেকে যেসব সুপারিশ এসেছে, সেগুলোর মধ্যে বাস্তবসম্মত সুপারিশ নিয়ে কাজ করার কথাও জানানো হয়।
সাংবাদিকদের জানানো হয়, দ্বাদশ নির্বাচনে মিডিয়ার অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করবে। তবে দ্বাদশ ভোটের তফসিল ঘোষণার আগেই চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারণ করবে ইসি।
ইসি অবশ্য নিজেদের প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিলেও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখবে।
মাস খানেকের মধ্যেই খসড়া চূড়ান্ত হবে জানিয়ে ইসির সাবেক সচিব ও বর্তমান কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য, ইভিএম, ব্যালট নিয়ে এমনকি সেখানে এভরিথিং থাকবে। খসড়াটা নিয়ে শেয়ার করব আমরা। দেখবেন কোনো সাজেশন আছে কি না। লজিক্যালি যদি বলতে পারেন এটা বাদ দিতে হবে। আমরা বাদ দেব।’
রোডম্যাপ চূড়ান্ত করার পর বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে বসার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘পরে আবার সংলাপ হবে। সেই রাউন্ডে আসবে যে আপনারা এইটা করতে বলেছিলেন, আমরা তো করতে চাচ্ছি। কিন্তু এগুলোতে এই চ্যালেঞ্জ আছে, এখন বলেন আমরা কী করব। কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব।’
মো. আলমগীর জানান, বিশেষ সংলাপে তাদের কৌশলপত্রে উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, সুবিধা-অসুবিধা, অর্থসংক্রান্ত বিষয়, লোকবল, চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি থাকবে। যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে সেগুলো নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপিকে আবার ডাকব নির্বাচনে
বিএনপির নির্বাচনে না আসার ঘোষণা নিয়ে সংকটকে রাজনৈতিক সংকট হিসেবেই দেখছেন ইসি কমিশনার আলমগীর।
সংকট মোকাবিলা রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে আবার অবশ্যই ডাকব। আমাদের কাছে সবার গুরুত্ব সমান। কেউ ছোট না, কেউ বড় না। যখনই প্রয়োজন হবে ডাকব। শুধু তাই নয়, যখন কোনো দল আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইবে আমরা বসব।’
তবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ইসি কোনো মন্তব্য করবে না বলে জানান আলমগীর।
সংলাপে তিন সুপারিশ
চলমান সংলাপ থেকে তিন ধরনের সুপারিশ এসেছে জানিয়ে ইসি কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘সংলাপ থেকে আসা প্রস্তাবে ইনফরমেশন গ্যাপ আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে কিছু বলা যাবে না। আমরা সব রেকর্ড রেখেছি। এখন পর্যালোচনা করছি। তিন ধরনের সুপারিশ করেছে। কিছু কিছু সুপারিশ আছে সংবিধান ও আইনের মধ্য থেকে করতে হবে।
‘কিছু কিছু সুপারিশ আইনের পরিবর্তন নিয়ে। আর কিছু কিছু আছে ইসির এখতিয়ারের মধ্যে নয়। সেটা নিয়ে কীভাবে কী করব, তা যখন আলাপ-আলোচনা করব তখন সিদ্ধান্ত নেব। তখন হয়তো আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবগুলো পাঠিয়ে দেব। তবে এখনো আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’
নির্বাচন এখনও অনেক দূরে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা হলো নির্বাচন কিন্তু বেশ দূরে। অনেক পরিবর্তন হয়তো আসবে। আগামী বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হবে তখন বোঝা যাবে। আগের কমিশন আগে রোডম্যাপ করে আলোচনা করেছে, আমরা আলোচনা করে রোডম্যাপ করব।’
সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা চাইবে ইসি
ইসি কমিশনার আলমগীর নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতাও চান। বলেন, ‘আমাদের মিডিয়ার সাপোর্টও লাগবে। আপনারা হয়তো সব চাওয়া পূরণ করতে পারবেন না। আমরা যদি ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে কাভারেজ চাই, আপনারা হয়তো দিতে পারবেন না। তবে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই।’