বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মা মহিলা দলে, ছেলে ছাত্রলীগে

  •    
  • ১ আগস্ট, ২০২২ ১৮:১৩

মা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকলে সন্তান হিসেবে ছাত্রলীগ করা নিয়ে পরিবারে কোনো সমস্যা হয় কি না- এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক পদ পাওয়া আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ‘তার (মা) রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে আমি অবগত না।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটির নেতাদের মধ্যে যাদের নিয়ে বিতর্ক, তাদের একজনের মা বিএনপির নারীবিষয়ক সংগঠন মহিলা দলের নেত্রী। সেই নেত্রী আবার আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করে বক্তব্য রেখেছেন। তার ছেলে ছাত্রলীগে পদ পাওয়ার পর সেই বক্তব্য এখন সামনে আসছে।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর থেকে সংগঠনের পদবঞ্চিতরা ব্যাপক ক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ করে কয়েকটি বিভাগে ক্লাসও বন্ধ করে রেখেছেন।

বিক্ষোভকারীদের অন্যতম অভিযোগ, অযাচিতদের পদ দিতে গিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী আর সক্রিয় নেতাকর্মীদের।

তাদের অভিযোগের সূত্র ধরে আসে আরাফাতুল ইসলামের নাম, যিনি উপ-সমাজসেবা সম্পাদক পদ পেয়েছেন। এও জানা যায়, তার মা রাশেদা বেগম কক্সবাজার জেলা মহিলা দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি সম্প্রতি সংগঠনের এক কর্মী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘খুনি’ আখ্যা দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।

পদবঞ্চিতরা বলছেন, আরাফাতের পরিবার বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ক্ষমতাসীন দলে ভিড়েছেন সুযোগ-সুবিধার আশায়। তার মতো একজনকে পদ দিয়ে ছাত্রলীগের ক্ষতি বই কোনো লাভ হচ্ছে না।

মায়ের রাজনৈতিক পরিচয় স্বীকার করতে চান না আরাফাত। দাবি করেছেন, এটি তার জানা নেই। তবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মায়ের প্রশংসা করেছেন। দাবি করেছেন, কিশোর বয়স থেকেই তিনি ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত। কর্মী হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেই এখন পদ পেয়েছেন।

নিউজবাংলাকে আরাফাতুল বলেন, ‘আমি স্কুল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। চট্টগ্রাম কলেজ যখন শিবিরের দখলে ছিল, তখন আমরা আন্দোলন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের প্রতিটি প্রোগ্রামে ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি আমরা।’

মা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকলে সন্তান হিসেবে ছাত্রলীগ করা নিয়ে পরিবারে কোনো সমস্যা হয় কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তার (মা) রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে আমি অবগত না।’

রাশেদা কক্সবাজারের চকোরিয়া পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনে তিনবারের কাউন্সিলর।

আরাফাতুল বলেন, ‘কতটা জনপ্রিয় হলে তিন তিনবার কেউ কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়?’

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামানোর চেষ্টা করছেন রাশেদা। তার ছেলে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনে পদ পেয়েছেন। মা হিসেবে তিনি কি খুশি?

কিন্তু চেষ্টা করেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না। পরিচয় জানিয়ে প্রশ্ন করতেই ফোন কেটে দেন তিনি।

রাশেদার পুরোনো যে বক্তব্য সামনে আসছে

গত বছরের ২২ নভেম্বর মহিলা দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের কক্সবাজার সফর উপলক্ষে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা মহিলা দল। সেদিন শেখ হাসিনাকে ‘খুনি’ উল্লেখ করে বক্তব্য দেন রাশেদা।

এ বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি রাশেদা বেগম। তবে ওই সম্মেলনে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে রাশেদা বেগম বক্তব্য দিয়েছেন। তবে কী বক্তব্য দিয়েছেন তা আমি শুনিনি।’

মানতেই পারছেন না ছাত্রলীগের অন্যরা

নতুন কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়ার পরেও আরাফাতুলের পদ পাওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না নজরুল ইসলাম সবুজ। বলেছেন, আরাফাতুল নিজেকে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী দাবি করলেও তাকে কখনও দেখেননি বলে জানান।

নিউজবাংলাকে সবুজ বলেন, ‘আরাফাতুল নামের ওই ছেলেকে আমি ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে চিনি না। ছাত্রলীগের কোনো কাজেও কখনো দেখিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটাও জানতাম না। কমিটিতে নাম দেখার পর বুঝতে পেরেছি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।’

আরাফাতুলের মায়ের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রীকে গালি দেয়া মহিলা দল নেত্রীর ছেলে ছাত্রলীগের কমিটিতে। বিষয়টা একবার চিন্তা করেন। শুধু সে না, মোটামুটি ত্যাগী কারও নাম কমিটিতে দেয়নি। ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে মো. ইলিয়াস সব নতুন ও বিএনপি-জামায়াতের পরিবারের ছেলেকে নেতা বানিয়েছে। এ রকম শুধু ওই ছেলে না, অন্তত এক ডজন আছে। তাদের তথ্যও আপনাদের দেব।’

পদবঞ্চিত আরেক নেতা মোহাম্মদ জুনায়েদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কমিটিতে এদের নাম এসেছে ইলিয়াসের সমর্থনে। নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মো. ইলিয়াস। তিনি ছাত্রলীগের আগের কমিটির নেতা। কমিটিতে যারা যোগ্য তাদের মূল্যায়ন না করে অযোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়েছে৷ ইলিয়াস নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য, নিজের স্বার্থ হাসিলে তাদের নেতা বানিয়েছেন। দ্রুত পরিবর্তিত কমিটি দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

যারা পদ দিয়েছেন, তারা এড়াচ্ছেন সাংবাদিকদের

আরাফাতুলের বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল করিম রুবেলকে ফোন করলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

ফোন ধরেননি বিজয় গ্রুপের নেতা ও নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস, যার বিরুদ্ধে আরাফাতুলসহ কয়েকজন বিতর্কিতকে ছাত্রলীগের পদ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার ফোন করে সাড়া না পাওয়ার পর এসএমএস করেও জবাব মেলেনি।

এ বিভাগের আরো খবর