ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে বন্ধু তালিকায় যুক্ত করা হয় সাধারণদের। এর পর থেকে তাদের অ্যাকাউন্টে শুরু হয় নজরদারি। এরপর টার্গেট করা হয় মোবাইল ব্যাংকিং- বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্টসহ ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন এমন ব্যক্তিদের। এরপর ওই ব্যক্তির ফোন নম্বর জোগাড় করে শুরু হয় টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা। কৌশলে ওই ব্যক্তির ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের তথ্য জেনে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে গত ৫-৬ বছরে প্রায় কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন ভুক্তভোগীর ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড থেকে হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। অবশেষে এ চক্রের মূল হোতা মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদ ধরা পড়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) গোয়েন্দা জালে।
মঙ্গলবার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খোকন ব্যাপারীকে গ্রেপ্তারের কথা জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর। তিনি জানান প্রযুক্তিগত ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খোকনকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে মুক্তা ধর বলেন, ‘সম্প্রতি একটি প্রতারক চক্র বিকাশ, নগদ ও রকেটের অফিসের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এমন একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরে সিআইডি অভিযান পরিচালনা করে রোববার নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে খোকনকে গ্রেপ্তার করে।
‘খোকনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের বিকাশ-নগদ রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রায় ছয় বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রের সব সদস্যের সম্মিলিত প্রয়াসে বিকাশ-নগদ-রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার কাজটি করত।’
এর কৌশল সম্পর্কে সিআইডির বিশেষ সুপার বলেন, ‘প্রথম ধাপে প্রতারক বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট আপডেট করার জন্য বলে। আপডেট না করলে ভুক্তভোগীর অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান তারা। দ্বিতীয় ধাপে প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত বিকাশ অ্যাকাউন্টটিতে ভুল পাসওয়ার্ড তিনবারের বেশি দিলে তার অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। তৃতীয় ধাপে প্রতারক ভুক্তভোগীকে জানায় তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়েছে।’ তবে ওই টাকা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব।
‘চতুর্থ ধাপে প্রতারক ভুক্তভোগীর ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের নম্বর ও CVNCV নম্বর জানতে চায়। পঞ্চম ধাপে ভুক্তভোগী এসব তথ্য সরবরাহ করলে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে সেই মোবাইল নম্বরে একটা ‘‘OTP’’ কোড সংবলিত একটি মেসেজ যায়। ষষ্ঠ ধাপে ভুক্তভোগী মেসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারক জানতে চায়। কোডটি পাওয়ার পর ভুক্তভোগীর ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা প্রতারক তার নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়।এভাবে ভুক্তভোগীর কার্ড থেকে টাকা সরিয়ে নেয়ার পর প্রতারকরা তাদের ব্যবহৃত সব আইডেন্টিটি গোপন করে রাখে।’গ্রেপ্তার খোকন এ পর্যন্ত তার সহযোগীদের নিয়ে প্রায় এক কোটিরও বেশি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। খোকন ‘it's khokon bro’ ও ‘it's khokon bro 02’ নামের দুটি ফেসবুক পেজ খুলে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে তাদের ফ্রেন্ড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করত। তারপর তাদের অথনৈতিক অবস্থা বুঝে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে এ সব কার্যক্রম করত বলে জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।