তিন বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
এর পরপরই ঘোষিত কমিটিতে পদবাণিজ্য ও অছাত্রদের রাখার অভিযোগে এনে ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ-অবরোধ করছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
রোববার মধ্যরাতে কমিটি ঘোষণার পর শুরু হওয়া অবরোধ সোমবার সকালে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্তও চলছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৩৭৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
৩৭৬ সদস্যের কমিটিতে সহসভাপতি পদে ৬৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ১১ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ১১ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের সঙ্গে সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সিএফসি গ্রুপের নেতা মো. আল-আমিন রিমন।
এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর সঙ্গে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন রাজু মুন্সী। তিনি সিক্সটি নাইন গ্রুপের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ কমিটি ঘোষণার পর কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে অবরোধের ডাক দিয়েছে একাংশের নেতা-কর্মীরা। কমিটি ঘোষণার পর রাতেই ক্যাম্পাসের সোহরাওয়ার্দী হল মোড়ে বিক্ষোভ শুরু করে শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয় এর পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।
এরপর রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা দেন বিজয় গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি, বিজয় গ্রুপের আরেক নেতা ও কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া মো. ইলিয়াসকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে।
এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া বিজয় গ্রুপের নেতা নজরুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘ত্যাগী, পরিশ্রমী ও যোগ্য ছেলেরা কমিটি থেকে বাদ পড়েছে। তারা তাদের মূল্যায়নের দাবিতে অবরোধের ডাক দিয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ইলিয়াস টাকার বিনিময়ে এখানে এমন ছেলেকে নেতা বানাইছে, যারা কখনও রাজনীতি করেনি। তাই আমাদের ছেলেরা অবরোধের ডাক দিয়েছে।’
বিজয় গ্রুপের কর্মী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি ইলিয়াস কমিটিতে অছাত্র, জামায়াত-শিবির, বিএনপি ব্যাকগ্রাউন্ডের অনেককে কমিটিতে এনেছে।
‘আমরা যারা ৭ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করেছি, তিনি আমাদের মূল্যায়ন করেননি। আমরা তার ওপর অসন্তোষ। যতক্ষণ পর্যন্ত ইলিয়াসকে বহিষ্কার ও কমিটি পুনর্গঠন করা না হবে, আমরা অবরোধ চালিয়ে যাব।’
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া মো. ইলিয়াসের মোবাইলে কয়েকবার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এসএমএস করলেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মহিউদ্দিন সুমন বলেন, ‘কর্মীরা পদবঞ্চিত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াসের বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করছে। আমরা এখনও অবস্থান করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পদবঞ্চিত কর্মীরা ফটকে অবস্থান করছেন। আমরা সকাল পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখব।’
২০১৬ সালের ১৭ জুলাই সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর গত সাড়ে ৫ বছরে আর কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি চবি ছাত্রলীগের।
২০১৫ সালের ২০ জুলাই মোহাম্মদ আলমগীর টিপুকে সভাপতি এবং ফজলে রাব্বি সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কমিটি গঠনের ৭ মাসের মাথায় প্রথম দফায় কমিটি স্থগিত করা হয়।
এই স্থগিতাদেশ ৫ মাস পর প্রত্যাহার করলেও ৯ মাসের মাথায় এক সংঘর্ষের পর দ্বিতীয় দফায় এ শাখার কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর ১৯ মাস পর ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই চবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এতে সভাপতি করা হয় রেজাউল হক রুবেলকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় ইকবাল হোসেন টিপুকে। এই কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেয়া হয়। নতুন ওই কমিটি ঘোষণার প্রায় তিন বছর পার হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।