আওয়ামী লীগ সরকারে থাকায় তাদের দায়িত্ব বেশি থাকার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রোববার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে এই বিষয়টি উল্লেখ করেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা।
আওয়ামী লীগের নেতাদের তিনি বলেন, ‘যেহেতু আপনারা সরকারে আছেন, সেহেতু আপনাদেরই কিন্তু বড় দায়িত্ব এই নির্বাচনটা যাতে আরও সুন্দর হয়, গ্রহণযোগ্য হয়, এই অবস্থাটা তৈরি করে দেয়া।
‘আমি শুধু আপনাদের মাধ্যমে সবাইকে আহ্বান জানাতে চাই, আমরা আমাদের দায়িত্ব শতভাগ পালন করব সততার সঙ্গে। আপনারাও আমাদের আন্তরিক সহযোগিতা দেবেন যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবেন। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি সবাই সম্মিলিতভাবে এ কাজগুলো করতে থাকি, নিশ্চয়ই আমরা কামিয়াবি হব। আমরা অবশ্যই কমিশনের ভাবমূর্তি আবার সস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারব।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে এই সংলাপ শুরু করছে নির্বাচন কমিশন। ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, এ নিয়ে এর আগের সংলাপের মতো এই সংলাপও বর্জন করেছে বিএনপি।
কেবল সংলাপ বর্জন নয়, নির্বাচন কমিশনকেই মেনে নিতে পারছে না দলটি। তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের পুরোনো দাবিতে ফিরে গেছে। ২০১৪ সালে আন্দোলন করে নির্বাচন ঠেকাতে না পারলেও আবার আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের কথাও বলছে।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমরা যখন থেকে দায়িত্ব নিয়েছি, ঠিক তখন থেকে আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পারছি এবং শুনতে পাচ্ছি নির্বাচন কমিশনে কোনো রকম কাজের পরিবেশ নেই। কোনো রকম কাজ করার সুযোগ নেই।
তারা নিরপক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে। এটাতে মনে হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি একেবারে নেই এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ভোটাররাও ভোট দিতে আগ্রহী না, তারা কেন্দ্রে আসতে চায় না। তারা নির্বাচনে কোনো আনন্দ বা আগ্রহই পাচ্ছে না।‘এই যে বিষয়গুলো এগুলো এখন আমাদের জন্য, নির্বাচন কমিশনের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তো আমি যেটা মনে করি আমাদের এই ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনাটা খুবই জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘হয়তো এটা জনগণের মনে একটা ভ্রান্ত ধারণা হয়ে গেছে এবং সেটাকে তো আমাদের দূর করার চেষ্টা করতে হবে। আর সেটা দূর করার ক্ষেত্রে আমি মনে করি যে আমরা যারা নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে যারা স্টেকহোল্ডার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অনেক প্রার্থী, ভোটার, জনগণ, আমরা নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের সঙ্গে যত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসন, জনপ্রশাসন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়ে আসলে এই জায়গাটা উদ্ধারের কাজে নামতে হবে।’
সংলাপে আওয়ামী লীগের হয়ে অংশ নেয়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ অবশ্য এই নির্বাচন কমিশনারের এসব বক্তব্য মেনে নিতে চাইছেন না। তিনি বলেন, ‘কে বলে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা নেই?...মাননীয় নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা বলেছেন নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তির কথা; নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি হচ্ছে এমন, পার্টিসিপেশন সেভেন্টি পার্সেন্ট, সিক্সটি পার্সেন্ট অ্যাবাউট সমস্ত ইলেকশনে। পার্টিসিপেশন নাই এটা কে বলে?’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ আছে নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা আছে বিধায়। জনগণ ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সে সমস্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরোধীরাও অনেক ক্ষেত্রে জয়লাভ করেছে৷’
‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে কী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে!’ এই মন্তব্য করে হাছান বলেন, ‘সুতরাং নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা আছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সংলাপে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশন ও কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।