আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার না করার পাশাপাশি ভোটের সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানোর তাগিদ দিয়েছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
দলের নেতাদের মতে, সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হলে আগের রাতেই ভোট দিয়ে দেয়ার যে বিষয় নিয়ে আলোচনা সেটি থাকে না।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে রোববার এসব কথা বলেন দলটির নেতারা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এই সংলাপে অংশ নেয়। কমিশনের পক্ষে ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে অন্য কমিশনাররা এবং কমিশন সচিব।
ভোটের দিন ভোরে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর প্রস্তাব করে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘এখন প্রত্যেকটি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। কাজেই চাইলে সকালবেলায় ব্যালট পৌঁছানো সম্ভব।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট দিয়ে দেয়ার যে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি ও সমমনারা, সে প্রসঙ্গে চুন্নু বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সকালে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর প্রস্তাব... তাহলে রাতের বিষয়টি আর আসে না। কিন্তু কাজটা হয়। কী বলব, এটা আমিও করিয়েছি। হয় না- এটা ঠিক না।’
সংলাপে দেশের আট বিভাগে আলাদা দিনে ভোট গ্রহণ করে এক দিনে ফল ঘোষণা এবং কোনো দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে।
এ ছাড়া নির্বাচনি কর্মকর্তারা নির্দেশ অমান্য করলে নিজস্ব ক্ষমতাবলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; নির্বাচনি খরচ ২৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা, প্রয়োজনে সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেয়া; সেবার বিল ও ক্রেডিট কার্ডের বিল বকেয়ার জন্য প্রার্থিতা বাতিলের বিধান পাল্টানো, সরকারি চাকরিজীবী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক ব্যক্তিদের অবসরের পর তিন বছর না গেলে ভোট করতে না দেয়ার দাবিও জানিয়েছে দলটি।
ইভিএম বিরোধিতা
কোনোভাবেই ইভিএমে ভোট নেয়া যাবে না- এ বিষয়ে জোরালো অবস্থান নেন জাপা নেতারা।
মহাসচিব চুন্নু বলেন, ‘ইভিএমে আমাদের আস্থা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমারও এতে কোনো আস্থা নেই। মানুষ মনে করে ইভিএমে ভোট পাল্টে দেয়া হলে কিছু করার নেই। কারণ ফল রি-চেক করা যায় না।’
কমিশনকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ইভিএম সম্পর্কে আপনাদের এক্সপার্টদের কথাও আমার মাথায় ঢোকেনি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস ছাড়া ইভিএম ব্যবহার যৌক্তিক হবে না।’
ইভিএমে ভোট হলে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন জাপা মহাসচিব।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘ভোটগ্রহণ শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। কে এটা ঠিক করবে, সেই লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
ইসিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় ইভিএম নষ্ট হলে সেটা আপনারা ঠিক করবেন, না নির্বাচনের অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম করবেন?’
বিপরীতে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান ইভিএমের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তাদের সময় ইভিএমে কোনো সমস্যা হয়নি। তারা ৪০০ থেকে ৫০০টি ভোট ইভিএমে করেছেন।
এই কমিশনারকে থামিয়ে দিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘ইভিএম খুবই স্পর্শকাতর। এটা নিয়ে যুক্তি দিয়ে লাভ নেই।’
ব্যালটে ভোট জালিয়াতি হলে প্রিসাইডিং কেন স্বাক্ষর দেন, সে প্রশ্ন তোলেন জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনিও বলেন, ‘ব্যালটেই সুষ্ঠু ভোট সম্ভব।’
সুষ্ঠু ভোটের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার ওপরও জোর দেন চুন্নু। বলেন, ‘আপনাদের দোষারোপ করে লাভ নেই। রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা না পেলে নির্বাচনে আপনারা অসহায়। সমস্যা আমাদের সিস্টেমের। কিছু সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না হলে যতই শক্ত আইন করা হোক, কোনো লাভ হবে না। নির্বাচনে ভালো পদ্ধতি হোক, সেটা আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেউই চায় না।’
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, ফখরুল ইমামও সংলাপে অংশ নেন।