কর্মসংস্থান বা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে কেবল স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিলেই চলবে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কৃষি, প্রকৌশলের বুনিয়াদি শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। বলেছেন, তাহলে মানুষ কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে।
দেশে দেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে বাংলাদেশে যুবাদের আধিক্যকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। যুবকদেরকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে পাঠানোর কথাও তুলে ধরেছেন তিনি।
রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রথম সভার সূচনা বক্তব্যে সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, শুধু বিএ, এমএ পাস করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ও কলেজ, যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে।
‘আমরা দেখেছি শুধু কোনোমতে ঘষেমেজে বিএ, এমএ পাস করেই চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ায়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে, যেমন আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাদের যে প্রতিষ্ঠান আছে সিআরআই, তার মাধ্যমে ইয়াং বাংলা। তারা যেন স্বপ্রণোদিত হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে তাদেরকে আমরা উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ইয়াং জেনারেশনের মাধ্যমে এটাই ঢোকাতে চাই, আমার কাজ আমি করে খাব। দরকার হলে আমি চাকরির পেছনে ছুটব না। নতুন চাকরি দেব।
‘সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এই পদক্ষেপ। আর সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাটা নিলে পরে এটা আরও বেশি কার্যকর হবে।
দক্ষতা বৃদ্ধির তাগিদ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশের প্রতিটি যুব সমাজ সুদক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে উঠুক। যত বেশি দক্ষ জনশক্তি আমরা গড়তে পারব, আমাদের দেশের কাজেও যেমন লাগবে আবার বিদেশেও লাগবে।’
প্রতি বছর ২২ লাখ কর্মক্ষম যুবগোষ্ঠী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শ্রম বাজারে যুক্ত হওয়া যুবশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব না হলে জনমিতিক সুবিধাকে জনমিতিক লভ্যাংশে রূপান্তর করা সম্ভব হবে না।
‘তাই এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে রূপকল্প ২০৪১’ এ পৌঁছানোর পথ সুগম করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা দেখাতে পারলে বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।’
বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধের দেশে পরিণত হয়ে গেছে। সেখানে আমাদের বড় বিষয় হলো, আমাদের বিশাল আকারে যুব শ্রেণি আছে। কাজেই আমরা চাই শ্রমবাজারে যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, সেই সঙ্গে উপযুক্তভাবে নিজেদের গড়ে তুলবে।’
দক্ষতা সনদ এবং দেশে-বিদেশে দক্ষতা মেলা আয়োজন করার পরামর্শও দেন সরকারপ্রধান। বলেন, এটি বিদেশে বাংলাদেশের দক্ষতার ব্র্যান্ডিং হিসেবে কাজ করবে এবং বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।
বিদেশিদের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়েও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রটা তারা তৈরি করতে চান।
পণ্য বহুমুখীকরণ, রপ্তানি বৃদ্ধিরও তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, শুধুমাত্র রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করলে আমাদের হবে না। আমাদের এখানে উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বহুমুখী করতে হবে। রপ্তানির বাস্কেটটাও আমাদের বাড়াতে হবে।
‘আরও কী কী পণ্য আমরা রপ্তানি করতে পারি, তার জন্য নতুন বাজার আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সে পণ্য আমরা কীভাবে উৎপাদন করতে পারি অথবা আমরাও কীভাবে বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারি সেই চিন্তাও থাকতে হবে।’