রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনি পদ্ধতির পরিবর্তন আনার পক্ষে সরব হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচন কমিশনের প্রধানকে এত চিন্তার পাশাপাশি রাতের ঘুম কেন নষ্ট করতে হচ্ছে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রোববার জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে সংলাপে বসে এসব কথা বলেন সিইসি।
সংলাপে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
দলটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়ার বিরোধিতা করেছে। তাদের মত, ব্যালটেই সুষ্ঠু ভোট সম্ভব।
আট বিভাগে আট দিনে নির্বাচন শেষে এক দিনে ফল প্রকাশের দাবি জাপার৷ এ ছাড়া প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে সংসদের আসন বণ্টনের দাবি জানানো হয় বিরোধী দলের পক্ষ থেকে।
এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হতাশার সুরে সিইসি বলেন, ‘আন্তরিকভাবে সবাই সাহায্য করবেন, আমাদের এটাও (এ নিয়েও) নিরাশা, যার ফলে আমরা ডিপেন্ড করতে চাই সিস্টেমের ওপরে। আজকে আমাকে এত বড় চ্যালেঞ্জ, এত চিন্তা করতে হচ্ছে কেন? রাতের ঘুম নষ্ট করতে হচ্ছে কেন?’
সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ সিস্টেম) প্রসঙ্গ টেনে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ‘একটা সিস্টেম প্রবর্তন করতে পারলে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ যে সিস্টেমটা, আমি কিন্তু পুরোপুরি এখনও জানি না, এটা কি আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত নয় অথবা আমাদের যে পলিটিক্যাল সেন্টিমেন্টের সঙ্গে কি এটা যায় না বা খাপ খায় না?’
একাধিক দিনে ভোট গ্রহণের জন্য আরও কতগুলো দলের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন বলে জানান সিইসি।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রায় ১২ কোটি ভোটার বা ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র হবে, আমাদের যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শক্তি, তা সংখ্যানুপাতিক দিক থেকে কম। এদিক থেকে যেটা আপনারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে ফলাফল প্রকাশ পেয়ে গেলে পরবর্তী দিনের জন্য সমস্যা হবে না?’
সিইসির এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফল এক দিনে প্রকাশ হবে বলে প্রস্তাব করেন চুন্নু। তিনি বলেন, ‘আট দিনে নির্বাচন করব। এরপর ভোট আর্মির কাছে জমা দেব এবং সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। এই জিনিসগুলো করতে পারেন। একাধিক দিনে হলে ভোট গণনা হবে সবার পরে; এক দিনে।’
ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি বলেন, ‘কাউকে না কাউকে নেতৃত্বসুলভ ভূমিকা নিয়ে সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমান যে সিস্টেম, এতে আমি যতই দক্ষতা দেখাই না কেন, পরিপূর্ণ সবার কাছেই একেবারে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উঠে আসা খুব কঠিন।
‘এই জন্য আপনারা গবেষণা করতে পারেন; ওয়ার্কশপ করতে পারেন। এটা আমি মনে করি, আপনারা একটি সুন্দর সিস্টেম চাচ্ছেন। অর্থাৎ আপনারা ভোট কারচুপি করতে চাচ্ছেন না। আমি দরিদ্র মানুষ। সেমিনার করার পয়সা আমার নাই, কিন্তু আপনাদের আছে, আমি জানি।
‘আপনারা পলিটিক্যাল সায়েন্সের প্রফেসরদের বলেন, পলিটিক্যাল কলিগদের বলেন যে আপনারা আসেন, শোনেন আমাদের। তাহলে হবে কী, একটা সহমত গড়ে উঠবে, একটা ঐকমত্য গড়ে উঠবে। তখন আমাদের আপনাদের সঙ্গে এত বসতে হবে না। সিস্টেম নির্বাচন করে দেবে।’
নির্বাচনের সময় সরকারের কাছ থেকেও সহায়তা পাবেন জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সবার আন্তরিকতা থাকলে, সবাই সমবেত চেষ্টা করলে, যতই কঠিন হোক, অনেকটা ফসল আমরা তুলে আনতে পারব।’