বৈধ পণ্য (তামাক) বিক্রির ওপর এত বিধিনিষেধের প্রস্তাব কার স্বার্থ রক্ষায় সেই প্রশ্ন তুলে দ্রুত এ বিষয়ে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নরসিংদী প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ আহ্বান জানান জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ (নাসিব), নরসিংদী জেলা শাখার ব্যবসায়ী নেতারা।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি ২০০৫ সালে প্রণীত হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে আইনটিতে সংশোধনী আনা হয়। এরপর ২০১৫ সালে এই আইনের বিধি চূড়ান্ত করা হয়।
বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই আইনের অধিকতর সংশোধনের লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে।
প্রস্তাবিত নীতিমালার খসড়ায় ধূমপান এলাকার ব্যবস্থা বিলুপ্তিকরণ, তামাক কোম্পানিগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর) নিষিদ্ধকরণ, ই-সিগারেট নিষিদ্ধকরণ, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির জন্য আলাদা লাইসেন্স গ্রহণ, ফেরি করে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধকরণ, সিগারেটের একক শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণসহ আরও বেশ কিছু প্রস্তাব রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নাসিব জেলা শাখার সভাপতি রুস্তম আলী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, সেখানে কয়েকটি এনজিও ছাড়া এই খাতের অংশীজনদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা তৈরি হওয়ায় ত্রুটিপূর্ণ আইন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বেশ কিছু ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা নিম্ন আয়ের খুচরা বিক্রেতা জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
তিনি বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী অর্থনীতির চাকা গতিশীল ও সচল রাখতে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তাসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে, যা আজ দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃত। খুচরা বিক্রেতারা হাট-বাজার,পাড়া-মহল্লায় বিস্কুট, সিগারেট, পানসহ বিভিন্ন তামাকজাত পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠে সবেমাত্র যখন তাদের জীবনমান ভালো হচ্ছে, ঠিক তখন তামাকজাত পণ্য বিক্রির জন্য আলাদা লাইসেন্স নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এমন অযৌক্তিক এবং অবাস্তব পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন ক্ষুদ্র ও ভাসমান ব্যবসায়ীরা।’
কীভাবে ক্ষুদ্র ও ভাসমান ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন তারও ব্যাখ্যা দেন রুস্তম আলী। তিনি জানান, সারা দেশ প্রায় ১৫ লাখ খুচরা বিক্রেতা আছেন, যাদের বেশির ভাগই ভাসমান। এই ভাসমান ব্যবসায়ীরা চাইলেও লাইসেন্স পাবেন না। কেননা তাদের তো আর হোল্ডিং নাম্বার থাকে না। অর্থাৎ তারা জীবিকা নির্বাহের পথ হারাবেন। বৈধ পণ্য বিক্রিতে এমন শর্ত ব্যবসানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
খসড়ায় ধূমপান এলাকার ব্যবস্থা বিলুপ্তিকরণের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তারও সমালোচনা করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট স্থানে ধূমপান করলে অধূমপায়ী, নারী ও শিশুরা পরোক্ষ ধূমপান থেকে নিরাপদ থাকবে। এটি তুলে দিলে যেখানে-সেখানে ধূমপানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে অধূমপায়ী, নারী ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনটি সামনে আনেন তিনি। বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১০ সালে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশ ছিল। তবে উন্মুক্ত স্থানে ধূমপানে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা পদক্ষেপে ২০২০ সালে এসে দেখা গেছে তা ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বিদ্যমান আইনটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে এই সংখ্যা আরও কমবে।’
প্রান্তিক পর্যায়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বার্থ বিবেচনায় তামাকপণ্যের খুচরা বিক্রি বন্ধের বিষয়টি আইনে যুক্ত করা অনুচিত, অযৌক্তিক এবং বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত সিগারেটের শলাকাভিত্তিক বাজার। যদি শলাকা বিক্রির অনুমতি দেয়া না হয়, তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে বিপাকে পড়বেন। প্যাকেট কেনার কারণে ভোক্তাদের তামাকপণ্য সেবনের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ বিফলে যাবে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ এই উপমহাদেশে কোথাও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এ রকম অবাস্তব বিধান নেই।’
বৈধ পণ্য কেন প্রদর্শন করা যাবে না সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যদি প্রদর্শন করা না হয়, তবে নকল পণ্যে বাজার ছেয়ে যাবে। এতে রাজস্ব হারাবে সরকার। ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দ্রব্য বা প্যাকেট দৃশ্যমান রাখা জরুরি।’ প্যাকেটে থাকা যথাযথ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ভোক্তাকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেয় বলে মনে করেন তিনি।
ভবিষ্যতে এই আইনের (প্রস্তাবিত) অপপ্রয়োগ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দিন শেষে সর্বসাকল্যে ৩০০-৪০০ টাকার মতো পুঁজি থেকে যায়। অথচ তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা ও কারাদণ্ডের কথা বলা হচ্ছে। এতে যে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তামাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের হয়রানি করতে মামলা করার সুযোগ পাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির শাহ্সহ উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে।