শুক্রবার সকাল। চট্টগ্রামের আমানবাজার এলাকার যুগীরহাটের আরএন্ডজে প্রাইভেট কেয়ারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভ্রমণে যাওয়ার উদ্দেশে যখন রওনা দিচ্ছিলেন, তাদের তখন বাসার জানালা দিয়ে দেখেন ওই এলাকার বাসিন্দা তারেক খান। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় আল আমিন হাশেমি রেস্টুরেন্টে নাশতা করতে গিয়ে তারেক দেখেন একই রেস্টুরেন্ট থেকে তারা দুপুরের খাবারের জন্য বিরিয়ানি নিচ্ছেন।
সেখান থেকে শিক্ষক, ছাত্রসহ ১৮ জন মাইক্রোবাসে করে ঘুরতে গিয়েছিলেন খৈয়াছড়া ঝরনায়। স্থানীয় তারেক সকালে যাদের হইহুল্লোড় করে যেতে দেখলেন, রাতে এলাকায় ফেরার পথেও তাদের দেখছিলেন। তবে এবার জীবিত নয়, ফিরতে দেখলেন নির্জীব-নিথর কতগুলো দেহ।
খৈয়াছড়া থেকে ফেরার পথে বেলা সোয়া ১টার দিকে মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইনে ওঠে যাওয়া মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী প্রাণ হারান ট্রেনের ধাক্কায়। আহত হন অন্তত পাঁচজন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
নিউজবাংলাকে তারেক বলেন, ‘ছেলেগুলোকে সকালে দেখেছি এলাকা থেকে ঘুরতে যাচ্ছে। রাত ১১টার দিকে ঠিকই ঘরে ফিরেছে ছেলেগুলো। কিন্তু জীবিত নয়, মৃত। বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে করে।
‘লাইন ধরে যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো এলাকার গলিতে ঢুকতেছিল, মানুষের আহাজারিতে পুরো এলাকার বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠল।’
নিহত ১১ জনের সবার বাড়ি আমানবাজার ও এর আশপাশের এলাকায়। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহগুলো প্রথমে আমানবাজার এলাকায় নেয়া হয়। এতে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নিহতের স্বজনদের সঙ্গে শোকে কাতর হন এলাকার মানুষও।
একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুতে পুরো এলাকা শোকের সাগরে ভাসছে উল্লেখ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য তোফায়েল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একসঙ্গে এত লাশ আমি পুরো জন্মেও দেখিনি। পুরো এলাকার মানুষ তাদের জন্য কাঁদছে। তারা সবাই মেধাবী ছেলে ছিল।
‘রাতে আমাদের সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম এসেছিলেন। হাটহাজারীর ইউএনও মহোদয় এসেছিলেন। ওনারা একটা একটা করে সব পরিবারে গেছেন। সবাইকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।’
আরেক বাসিন্দা মো. এস্কান্দর বলেন, ‘এলাকায় একসঙ্গে এত লাশ, এত অ্যাম্বুলেন্স কখনও দেখিনি, চারদিকে মানুষ আর আহাজারি।’
রাতেই জানাজা হয়েছে দুজনের। তারা হলেন মোস্তফা মাসুদ রাকিব ও ওয়াহিদুল আলম জিসান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে খন্দকিয়া ছমদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ ও নতুন পাড়া আলম কোম্পানি সংলগ্ন মাঠে তাদের জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে রাকিবকে হাটহাজারীর মাদার্শার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। আর জিসানকে দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
ইউপি সদস্য জানান, বাকিদের শনিবার সকাল ১০টায় খন্দকিয়া ছমদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় জানাজা হবে পার্শ্ববর্তী নজু মিয়া স্কুলমাঠে, সকাল সাড়ে ১০টায়।